গতবছরের তুলনায় দুর্ঘটনা কমেছে

দেশে ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরেছে ২৮৫ প্রাণ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২ মে ২০২৩, ১৫:৫৬ |  আপডেট  : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৫

প্রতীকী ছবি

ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে ১৪ দিনে (১৬-২৯ এপ্রিল) দেশে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮৫ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ১৩৩ জনই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। তবে আরেক বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে এই সময়ে (১৫-২৯ এপ্রিল) নিহতের সংখ্যা ৩২৮, যা গত বছরের তুলনায় ২১ ভাগ কম।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ২৪০টি দুর্ঘটনা নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪৫৪ জন। আর নিহতের মধ্যে নারী ২৬ জন ও শিশু ৫৩টি। এছাড়া ১২৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৩৩ জন, যা মোট নিহতের ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫২ দশমিক ৯১ শতাংশ। 

সংস্থাটির হিসাবে, এই সময়ে পাঁচটি নৌ-দুর্ঘটনায় আট জন নিহত ও দুই জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ৬১ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি।

অন্যদিকে একই দিন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি জানান, এবারের ঈদযাত্রার ১৫ দিনে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩২৮ জন নিহত এবং ৫৬৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সড়কের সঙ্গে রেল ও নৌপথ মিলিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩৪১টি। এসব দুর্ঘটনায় ৩৫৫ নিহত ও ৬২০ জন আহত হয়েছেন।

তাদের হিসাবে, এ বছরের ঈদযাত্রায় সড়কে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় দুর্ঘটনা কমেছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ, প্রাণহানি কমেছে ২১ দশমিক ১ শতাংশ এবং আহত ৩৩ শতাংশ কমেছে।

ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১৫ এপ্রিল থেকে কর্মস্থলে ফেরার ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত (১৫ দিন) রেলপথে ২৭টি ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ৫৫ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ০৫ জন নিহত ও ২২ জন নিখোঁজ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারও সড়ক দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। ঈদযাত্রায় ১৬৫টি বাইক দুর্ঘটনায় ১৬৭ জন নিহত ও ১২০ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ, নিহতের ৫১ শতাংশ এবং আহতের ২১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রায়।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যান তুলে ধরে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে— এসব দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহত হয়েছেন ১৩৩ জন (৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ), বাস যাত্রী ৯ জন (৩ দশমিক ১৫  শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-ট্রলি আরোহী ১৫ জন (৫ দশমিক ২৬  শতাংশ), প্রাইভেটকার আরোহী দুই জন (০ দশমিক ৭০ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৫১ জন (১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-চাঁন্দের গাড়ি-টমটম-লাটাহাম্বা) ১০ জন (৩ দশমিক ৫০ শতাংশ) এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী ১৩ জন (৪ দশমিক ৫৬  শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৩৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে এবং ১০ দশমিক ৮৩  শতাংশ শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন

দুর্ঘটনাগুলোর ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশই মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ২২ দশমিক ০৮ শতাংশ পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ

ঈদুল ফিতর উদযাপনকালে ১২৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩৩ জন, যা মোট নিহতের ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫২ দশমিক ৯১ শতাংশ।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ, মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ, অন্য যানবাহন দ্বারা মোটরসাইকেলে ধাক্কা বা চাপায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৩ দশমিক ৬২  শতাংশ।

উল্লেখ্য, বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫১ শতাংশ ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সী।

২০২২ সালের ঈদুল ফিতর উদযাপনকালে ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমেছে ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-পুলিশের পিকআপ-ওয়াসার পানির গাড়ি-তেলের ট্যাঙ্কার-চব্বিশ চাকার লরি ও অজ্ঞাত গাড়ি ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ, মোটরসাইকেল ৩২ দশমিক ১১ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১৬ দশমিক ৮৫  শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-চাঁন্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা) ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪৩৯টি। দুর্ঘটনা কবলিত যানগুলোর মধ্যে ট্রাক রয়েছে ৩৪টি, বাস ৬২টি, কাভার্ডভ্যান ৯টি, পিকআপ ১৬টি,  ট্রলি ছয়টি, লরি তিনটি, ট্রাক্টর সাতটি, ড্রাম ট্রাক পাঁচটি, পুলিশের পিকআপ এক, ওয়াসার পানির গাড়ি এক, তেলের ট্যাংকার দুটি, ২৪ চাকার লরি একটি, অজ্ঞাত গাড়ি দুটি, মাইক্রোবাস ১২টি, প্রাইভেটকার ১৬টি, অ্যাম্বুলেন্স একটি, মোটরসাইকেল ১৪১টি, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৭৪টি, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-চাঁন্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা) ২৬টি এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২০টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, সকালে ২৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, দুপুরে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ, বিকালে ১৮ দশমিক ৩৩  শতাংশ, সন্ধ্যায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং রাতে ১৭ দশমিক ০৮ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬ দশমিক ৩১ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৭৩  শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ২২ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ২২ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ ঘটেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৬৮টি দুর্ঘটনায় ৭৫ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৯টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ১৩টি দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম চাঁদপুর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, মাগুরা ও বরগুনা জেলায়। এই ৫টি জেলায় স্বল্প মাত্রার কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও রাজধানীতে ১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত