দুই ছেলেকে নিয়ে অবৈধ মদের ব্যবসায় ষোলঘরের ইউপি চেয়ারম্যান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২২, ১০:০১ |  আপডেট  : ১৭ মে ২০২৪, ১৫:৫২

দুই ছেলেকে নিয়ে অবৈধ মদের ব্যবসা করতেন মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার ষোলঘরের ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম। গার্মেন্টস পণ্যের আড়ালে বিদেশ থেকে আনতেন মদ। সেগুলো সরবরাহ করতেন ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। র‌্যাবের অভিযানে আজিজুল ইসলামের সর্বশেষ চালানে অবৈধভাবে আনা ৩৭ হাজার বোতল বিদেশি মদ জব্দ করেছে র‌্যাব। যার আনুমানিক মূল্য ৩৭ কোটি টাকা। গ্রেফতার করা হয়েছে আব্দুল আহাদ নামে আজিুজল ইসলামের এক ছেলেসহ তিন জনকে। রবিবার ২৪ জুলাই বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন যে, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ থেকে অবৈধ পণ্য নিয়ে দুটি কনটেইনারবাহী ট্রাক ঢাকার দিকে আসছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার ২২ জুলাই মধ্যরাতেই নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন টিপরদি এলাকায় একটি চেকপোস্ট বসানো হয়। শনিবার ২৩ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুটি কনটেইনারবাহী ট্রাক  তল্লাশির জন্য থামায় র‌্যাব। এসময় দুটি ট্রাকে থাকা নাজমুল মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে  কনটেইনারের ভেতরে টাইলস আছে বলে জানান তারা। পরে তাদেরকে কনটেইনারে থাকা পণ্যের চালান দেখাতে বলা হয়। চালানের কাগজপত্রে  সুতা ও মেশিনারিজ উল্লেখ থাকায় র‌্যাব সদস্যদের আরও সন্দেহ হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল ও সাইফুল কনটেইনার দুটিতে অবৈধভাবে আনা সিগারেটের কথা জানান। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা ভেতরে অবৈধ বিদেশি মদ থাকার কথা স্বীকার করেন। পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জের কাস্টমসের একজন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে ডেকে এনে সিলগালা করা কনটেইনারের দরজা খোলা হয়। এসময় একটি কনটেইনার থেকে ২১ হাজার বোতল বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ ও আরেক কনটেইনার থেকে  ১৬ হাজার বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, দুই কনটেইনার থেকে উদ্ধার হওয়া অবৈধ বিদেশি মদের বোতলগুলো মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায় আজিজুল ইসলামের একটি ওয়্যার হাউজে যাওয়ার কথা ছিল। র‌্যাবের দলটি তাৎক্ষণিকভাবে ওই ওয়্যার হাউজে অভিযান চালালে সেখানে কাউকে না পেয়ে আজিজুল ইসলামের ওয়ারীর বাসায় অভিযান চালায়। ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে ৯৮ লাখ নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এরপর রবিবার ২৪ জুলাই সকালে বিমানবন্দর এলাকা থেকে আজিজুল ইসলামের মেজো ছেলে আব্দুল আহাদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, বাবা আজিজুল ইসলামের নির্দেশে তিনি নিজে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে গিয়ে এই মদের চালানটি বের করেছেন। স্থানীয় একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মধ্যস্থতায় কাস্টমস হাউজ থেকে স্ক্যান ছাড়াই চালানটি বের করা হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন জানান, তারা ওই সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন। তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। সিঅ্যান্ডএফ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করতে পারলে এই ঘটনায় কোনও কাস্টমস কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন কিনা, তাও বেড়িয়ে আসবে।

গার্মেন্ট পণ্যের আড়ালে মদ

র‌্যাব সূত্র জানায়, আজিজুল ইসলাম ও তার দুই ছেলে মিজানুর রহমান আশিক এবং আব্দুল আহাদ মিলে অবৈধ মাদকের ব্যবসার এই সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করতেন। দুবাইয়ে অবস্থান করা নাসির নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে এসব মদ আনা হতো। নাসিরই ঢাকার ক্লাবগুলোতে মদ সরবরাহের ব্যবস্থা করে দিতেন। গার্মেন্টস পণ্য আমদানির আড়ালে তারা অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসব মদ আমদানি করতেন। সর্বশেষ চালানে ঈশ্বরদি ও কুমিল্লা ইপিজেডের দুটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের নামে চালানপত্র তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ওই প্রতিষ্ঠান দুটির কোনও হদিস পাওয়া যায়নি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, গার্মেন্টস পণ্য আনার আড়ালে চলতি বছরেই তারা আরও চারটি অবৈধ মদের চালান এনেছেন। প্রতি চালানে প্রায় ১৪ হাজার বোতল বিদেশি মদ এনে ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব ও বারে সরবরাহ করা হয়েছে।

দুবাইয়ে পালিয়েছে বাবা ও এক ছেলে

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের কাস্টমস হাউজ থেকে অবৈধ মদের চালানটি বের হওয়ার পরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে বাবা আজিজুল ইসলাম ও বড় ছেলে মিজানুর রহমান আশিক শনিবার সকালে দুবাই পালিয়েছেন। মেজো ছেলে আহাদও পালিয়ে দুবাই যাওয়ার জন্য বিমানবন্দর গিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই র‌্যাব কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতার করেন।

আহাদ জানান, তারা দুই ভাই ও তাদের বাবা প্রায় প্রতি মাসেই দুবাই যাতায়াত করতেন। দুবাইয়ে অবস্থানকারী নাসিরের মাধ্যমে তারা এই অবৈধ মদের ব্যবসা শুরু করেন। তারা অর্থ লগ্নি করে অবৈধভাবে আনা মদগুলো নিজেদের ওয়্যার হাউজে স্টক করতেন। পরে চাহিদা মতো বিভিন্ন ক্লাব ও বারে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হতো।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন জানান, এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আনা এসব মদের গ্রাহক কারা ছিল, এসব বিষয়সহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও অন্যান্য যারা এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিষয়ে খোঁজ করা হচ্ছে। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত