টিকা নেওয়া থাকলে করোনা–পরবর্তী জটিলতা কমে
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২১, ০৮:৩৭ | আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৭
দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও কারও কারও যে করোনা হয়, সেটা আমাদের শঙ্কিত করে ঠিকই, কিন্তু আবার এটাও ঠিক যে টিকার কারণে করোনার তীব্রতা সাধারণত বাড়তে পারে না। বরং দেখা যায়, টিকা নেওয়ার ফলে অল্প সময়েই সুস্থ হয়ে ওঠা যায় এবং শ্বাসতন্ত্র বা কিডনি-লিভার-হার্টে কম ক্ষত সৃষ্টি হয়। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা ‘লং কোভিড’ বা করোনা–পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাও কমায়। এটা টিকার একটি বিরাট ভূমিকা।
‘মেডিকেল নিউজ টুডে’ সাময়িকীর অনলাইনে ২৬ মে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তৃত তথ্য জানা গেছে। লং কোভিডের লক্ষণগুলো হলো করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও অবসন্নতা, মস্তিষ্কে দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশিতে ব্যথা, স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি নষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব একজিটার ও ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট–এর বিজ্ঞানীরা একটি জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেছেন, টিকা নেওয়ার পর কোভিডে আক্রান্ত হয়ে জটিলতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা কম। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অর্ধেকের বেশি দ্রুত সুস্থ হয়েছেন এবং তাঁদের লং কোভিডের জটিলতায় পড়তে হয়নি। তাঁদের গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে রচিত নিবন্ধ শিগগিরই প্রকাশিত হবে।
টিকা নেওয়ার পরও লং কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে পরিচালিত একটি বড় জরিপের ফলাফল বেশ আশাপ্রদ। আক্রান্তদের ৫৭ শতাংশ জানিয়েছেন, টিকা নেওয়ার ফলে তাঁদের অবস্থার সামগ্রিক উন্নতি ঘটেছে। বিপরীতে ১৯ শতাংশের অবনতি ঘটেছে।
গবেষকেরা বলছেন, এর একটি কারণ হতে পারে এই যে টিকা নেওয়ার ফলে ভাইরাসের অবশেষসমূহ নির্মূল হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য ফিরে আসে।
নতুন নতুন আবিষ্কার
করোনার চিকিৎসা ও বিশ্বব্যাপী অতিমারি রোধের উপায় নিয়ে দেশে দেশে ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে চলেছেন। ইতিমধ্যে কিছু নতুন আবিষ্কার আমাদের আশাবাদী করে তুলছে। অবশ্য এখনো সব ওষুধ, চিকিৎসা বা সাফল্যের সঙ্গে করোনা মোকাবিলার পদ্ধতি সুনিশ্চিতভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আমাদের হয়তো আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে।
যেমন সেদিন একটি চমকপ্রদ খবর আমাদের আশার আলো দেখিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে করোনা পরীক্ষার ফল পাওয়ার একটি বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকেরা বলছেন, মুখের লালা কিংবা থুতু বিশেষ ধরনের সেন্সরের মাধ্যমে পরীক্ষা করে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে কোনো ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত কি না। এর চেয়ে বড় সুখবর আর কী হতে পারে!
এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অব ভ্যাকুয়াম সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বি’ নামের একটি সাময়িকীতে। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরাল ক্যান্ডিডেট মিনঘান জিয়ান বলেছেন যে নতুন এ করোনা পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বায়োসেন্সের স্ট্রিপটি দেখতে হবে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষার কিটের মতো।
এর এক প্রান্তে একটি মাইক্রোফ্লুইড চ্যানেল থাকবে। এতে ইলেকট্রোড থাকবে, যার মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করা হবে।’ (সূত্র: প্রথম আলো ডেস্ক, অনলাইন ২১ মে ২০২১, ১৫: ৫৭)।
করোনা অতিমারি কার্যকরভাবে রোধ করতে হলে বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এ কথাটা সবাই বলেন। কিন্তু সেদিন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একটি ‘গ্লোবাল প্যানডেমিক রাডার’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলেছেন। বিশ্বের কোথায় কোভিড ও তার নতুন কোনো ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে তার নজরদারি করবে এ ব্যবস্থা। এর ফলে অবস্থা অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া সহজ হবে। এই ‘ইন্টারন্যাশনাল প্যাথোজেন সার্ভায়লেন্স নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্মত হয়েছে। যদি এ ধরনের উদ্যোগ সফল হয়, তাহলে বিশ্ব পরিসরে করোনা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
আর একটি চমকপ্রদ খবর ছাপা হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশনস ট্রাস্টেড সোর্স’ জার্নালে। করোনার চিকিৎসায় একটি খাওয়ার ওষুধ নিয়ে গবেষণা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মুখে খাওয়ার ভাইরাল-প্রতিরোধী এমকে ৪৪৮২ ওষুধটি বেশ কার্যকর বলে জানানো হয়েছে। বিশেষত ফুসফুসের সংক্রমণ কার্যকরভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে সীমিত পরীক্ষায় জানা গেছে। ব্যাপকসংখ্যক মানুষের ওপর পরীক্ষায় সুফল পাওয়া গেলে এটি কোভিড রোধে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।
এ ধরনের আরও গবেষণা চলছে। সহজে ও কার্যকরভাবে কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপায় শিগগিরই বের হবে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি।
কালো ছত্রাকের ভয়
ভারতে যে কালো ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটছে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকলে এই ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেক দিনের অব্যবহৃত জুতা-মোজা, জামাকাপড় প্রভৃতি ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষভাবে একই মাস্ক না ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা যাবে না। আর নিজের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী রাখার প্রতি যত্নবান হতে হবে।
বিভিন্ন অসুখে বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড ব্যবহার করলে প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* আব্দুল কাইয়ুম: মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত