জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবারও চলাচল

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:০৬ |  আপডেট  : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১২

বাগেরহাট ফকিরহাট উপজেলার ঢাকা-খুলনা পুরাতন মহাসড়কের ভৈরব নদীর উপর নির্মিত পাকিস্তান আমলের বেইলী ব্রীজটির ব্যারিকেট ভেঙ্গে ফেলেছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ফকিরহাট সদর ও মূলঘর ইউনিয়নে সংযোগ রক্ষাকারী ব্রীজটি দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ থাকার পর বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ একমাস আগে ব্রীজটি ব্যারিকেট দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় এবং বন্ধ বেইলী ব্রীজটি সওজের পক্ষ থেকে মেরামতের উদ্যোগ না নেওয়ায় এ পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী লোকজন ব্যারিকেটটি ভেঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবারও পারাপার করছেন।

উপজেলার পুরাতন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাঠালতলা মোড় সংলগ্ন ভৈরব নদী গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রীজটি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদাসীনতা রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। প্রায় তিন যুগ আগে তৈরী ব্রীজটি দীর্ঘ ৬বছর যাবৎ লোহার পাতের বিভিন্ন স্থানে মরিচা ধরে ভেঙ্গে ও খসে যাওয়ায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় ঘটে। এলাকাবাসীর দাবী, সওজ মাঝে মধ্যে দায়সারা ভাবে দু’একটি পাত মেরামত করলেও কিছু দিনের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে আবার ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সেতুটির পাতগুলো সিডিউল অনুযায়ী দেয়ার নিয়ম থাকলেও সঠিক ভাবে দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয়দের। তাঁরা বলেন, ব্রীজটি মেরামত না করে মাসখানেক আগে (১২ ডিসেম্বর) ব্যরিকেট তৈরি করে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এটি মেরামতের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশ এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে দুই দিন আগে ব্যারিকেট ভেঙ্গে ফেলেছে। ব্রীজ সংলগ্ন মূলঘর ইউনিয়নের চরভৈরব গ্রামের বাসিন্দা মো. লতিফ মোল্লা, ভ্যান চালক ফিরোজ আলী, সবজি চাষী কালীদাস বাছাড় সহ উপস্থিত অনেকে জানান, মূলঘর এলাকা থেকে ফকিরহাট সদরে ব্রীজ দিয়ে আসতে শুধুমাত্র ১১০ ফুটের দুরত্ব, অথচ সেটি বন্ধ করায় মানুষকে এক কিলোমিটারের বেশি ঘুরে ফকিরহাট সদরে আসতে হয়। আবার ব্যস্ততম বিশ^রোড দিয়ে ঘুরে আসতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। বেইলী ব্রীজের নিকটবর্তী মূলঘর অংশে একাধিক সরকারি, বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে। অন্যদিকে মূলঘর থেকে ফকিরহাট সদর এলাকায় একাধিক স্কুল কলেজে কয়েকশত ছাত্রছাত্রীরা এ ব্রীজের উপর দিয়ে যাতায়াত করে।

জানা গেছে, প্রায় তিন যুগ আগে ভৈরব নদীর উপর ফকিরহাট ও মূলঘর সংযোগ রক্ষাকারী বেইলী ব্রীজটি তৈরি করা হয়। মূলঘর ইউনিয়নবাসীসহ আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এ ব্রীজ দিয়ে ফকিরহাট সদর বাজার, উপজেলা পরিষদ, মডেল থানা, বাগেরহাট ও খুলনা অ লসমূহে যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে ব্রীজটি এসব অ লের সঙ্গে অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র ফকিরহাট সদর বাজারের যোগসূত্র স্থাপন করে। এসব কারণে ব্রীজের বেরিকেট ভেঙ্গে যানবাহন ও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। ভূক্তভোগী জনসাধারণের মাঝে বেইলী ব্রীজটি নিয়ে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. হিটলার গোলদার বলেন, বেইলী ব্রীজটি অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি রবি ও বুধবার সাপ্তাহিক হাটে ফকিরহাটের এ ব্রীজ দিয়ে হাজার হাজার পথচারী ও বিপুল সংখ্যাক যানবাহন চলাচল করায় চাপ বেড়ে যায়। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এখানে। তিনি আশু প্রতিকারে সওজের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, বেইলী ব্রীজটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় পারাপারে ঝুঁকি বেড়েছে। তবে এখানে শীঘ্রই বেইলী ব্রীজের পরিবর্তে কংক্রিটের ব্রীজ নির্মাণ করা হবে।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত মন্ডল বলেন, এখানে বেইলী ব্রীজটি ভেঙে আমরা কংক্রিটের ব্রীজ নির্মান করবো। ইতোমধ্যে টেন্ডার ও ওয়ার্ক অর্ডার সম্পন্ন হয়েছে। এ রাস্তায় পর্যায়ক্রমে ১০টি ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স ফলতিতা এলাকা থেকে ছোট ব্রীজগুলোর কাজ শুরু করেছেন। ব্রীজের কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রীজটি ব্যবহার না করার জন্য এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত