গ্রামগঞ্জে তাল পিঠা খাওয়ার ধুম

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫:২৮ | আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:১৭

৬ ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে একেক ঋতুতে একেক রকম খাবারের ধুম পড়ে গ্রামগঞ্জের মানুষের। তা আবার প্রাচীণকাল থেকেই। এখন বাংলা বছরের ভাদ্র মাস শরৎকাল। এ সময় তালগাছ থেকে ধপধপ করে পাকা তাল পড়ছে। গাছ থেকে যখন পাকা তাল পড়ে তখন একরকম ধপধপ শব্দ হয়। যে শব্দ কানে আসলেই বুঝা যায় তালগাছ থেকে তাল পড়েছে। প্রাচীণকাল থেকে ভাদ্র মাসের ১৩ তারিখে তেরা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তেরা উপলক্ষ্যে পাকা তাল দিয়ে তাল পিঠা, তাল বড়া ও তাল পায়েসসহ নানা রকমের খাবার তৈরি করা করা হয়। প্রাচীণকালের এই তেরা উৎসব এখনো ধরে রেখেছে গ্রামগঞ্জের মানুষেরা। যাদের তালগাছ রয়েছে তারা ঘুম থেকে জেগে ভোরেই তালগাছ তলা থেকে তাল কুড়িয়ে নিয়ে আসে। আর যাদের তালগাছ নেই তারা হাট-বাজার থেকে তাল কিনে এনে সহজ পক্রিয়ায় তাল চিপে রস বের করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে গুড়, চিনি, দুধ ও গরম মশলা দিয়ে পাতিলে তুলে জ্বাল করে নেয় রাধুনীরা। এরপর সুস্বাদু তাল পিঠা, তাল বড়া ও তাল পায়েসসহ নানা রকমের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। তালের ২টি জাত রয়েছে। তা হচ্ছে গ্রাম্য ভাষায় মহিষা তাল ও দুধা তাল। মহিষা তাল দেখতে কালো রঙের বড় আর দুধা তাল দেখতে লালটে রঙের একটু ছোট।
নন্দীগ্রাম পুরাতন বাজারের তাল বিক্রেতা মোবারক আলী জানান, আমি প্রতিদিন গ্রাম থেকে তাল সংগ্রহ করে এনে বাজারে বিক্রি করি। এতে কিছু টাকা আয় হয়। গাছপাকা ছোট তাল ১০-১৫ টাকা, মাঝারি তাল ২০-২৫ টাকা ও বড় তাল ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আর হয়তো ৫/৭দিন বাজারে তাল বিক্রি করতে পারবো। এরপর তালের সিজন শেষ হয়ে যাবে।
নন্দীগ্রাম থানা রোডের বাসিন্দা অসিম কুমার রায় জানান, আমার এক আত্মীয় বাসায় কয়েকটি তাল দিয়ে গিয়েছিলো। সেইসব তালের রস দিয়ে তাল পিঠা ও তাল বড়া তৈরি করে খেয়েছি। তাল পিঠা ও তাল বড়া খেতে খুব মজা লাগে। তেরা উপলক্ষ্যেও বাসায় তাল পিঠা ও তাল বড়া তৈরি করা করা হবে। গৃহিণী সীমা রাণী জানান, আমার তাল দিয়ে তাল পিঠা ও তাল বড়া তৈরি করে খেতে খুব মজা লাগে। তাই প্রতিবছর আমি তাল পিঠা ও তাল বড়া তৈরি করে থাকি। গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে তাল খুব প্রিয় খাবার। তাই এখন গ্রামগঞ্জে তাল পিঠা, তাল বড়া ও তাল পায়েসসহ নানা রকম খাবার তৈরি করে খাওয়ার ধুম পড়েছে। তাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়, তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। এন্টি অক্সিডেন্ট গুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় তাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও তাল বেশ উপকারী। তালে আছে ভিটামিন বি, তাই ভিটামিন বি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে। তাল ফল হিসেবে বড় হলেও বাজারমূল্য খুবই কম। এ ছাড়া যেসব গ্রামে তালগাছ রয়েছে সেসব গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের তাল কেনার প্রয়োজন হয় না। তালগাছের মালিকরা বিনামূল্যেই তাল দিয়ে থাকে। তালের রস অনেকদিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। গ্রামগঞ্জে তালগাছ গাছ অনেক কমে গেছে। যে কারণে আগের মতো আর তাল পাওয়া যায় না। তাই বেশি বেশি করে তালবীজ রোপণ করা প্রয়োজন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত