কাউনিয়ায় দিনে দুধ উৎপাদন ৫৭২০০ লিটারখড়ের তীব্র সংকট

গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিপাকে খামারিরা, ক্ষতিতে কমছে খামার

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৬ |  আপডেট  : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৫

গোখাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন রপুরের কাউনিয়ার খামারিরা। ভুসি, খড়, ক্যাটল বুস্টার, গম, চালের খুদ, ধানের কুঁড়া, কাচা ঘাস ইত্যাদির দাম বাড়ায় গরুকে খাদ্যের চাহিদার তুলনায় কম খাওয়ানো হচ্ছে। এতে দুধ উৎপাদন ও মোটাতাজাকরণে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। উপজেলার সর্বত্র গো খাদ্যে খড়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন হাট বাজার গুলোতে চড়া দামে খড়ের আটি বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে এলাকার খামারীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পশু পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন পশু পালন। অনেক খামারি জানিয়ছেন তারা আর পশু পালন করবেন না। উপজেলার অন্তত ১০ জন খামারি জানান, খড় ও ঘাসের পাশাপাশি গরু-ছাগলকে ভুসি, চালের খুদ, ধানের কুঁড়া এবং বিভিন্ন কম্পানির তৈরি কৃত্রিম ফিড (দানাদার খাদ্য) খাওয়ানো হয়। কৃষকরা গবাদি পশুসহ বহু মানুষ হাস-মুরগি, কবুতর, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন পশুপাখি পালন করে থাকেন। খাদ্যের দাম বাড়ায় তাঁরাও এসব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। হাটবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬মাস আগেও ভুসি প্রতি বস্তা (৩৫ কেজি) বিক্রি হয়েছে ১৩০০ টাকা, বুটের খোসা প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) ১৩০০ টাকা, দানাদার ফিড প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) ১২২৫ টাকা ও খুদ প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ১৪৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি গমের ভুসির দাম ৩৭ টাকা, বুটের খোসা ৫২ টাকা, চালের খুদ ২৯ টাকা ও দানাদার ফিডের দাম ৪৯ টাকা ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রতি কেজি গমের ভুসি ৫২ টাকা, বুটের খোসা ৬২ টাকা, চালের খুদ ৩৮ টাকা ও দানাদার ফিড ৫৫ টাকা হয়েছে। গদাই গ্রামের কৃষক শাজাহান জানান গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও খরের পুজে (গাদায়) ইদুর আক্রমনে কৃষকের সর্বনাস ঘটিয়েছে। বর্তমানে এক আঁটি খড় ১৩ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী সহিদার জানান, খামারীরা আগের তুলনায় গরুর দানাদার ফিড, ভুসি ও খুদ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। গোখাদ্যের দাম প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায় উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে খামারী ৩২৭৩জন। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু দুধের দাম সে তুলনায় বাড়ছে না। এই পরিস্থিতিতে খামারিরা চরম বিপাকে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারিদের খড় বা দানাদার খাদ্যের উপর নির্ভর না হয়ে উন্নত জাতের ঘাস চাষে উৎসাহিত করছেন, যাতে খরচ কমে এবং গো-খাদ্যের সংকট মেটানো যায়। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এআর আল মামুন জানান, গো-খাদ্যের কাঁচামালের দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে গো-খাদ্যের কাঁচামালের সরবরাহ কমে যাওয়াও একটি কারণ। গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও দুধের দাম সেভাবে বাড়ছে না, যার ফলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। খাদ্যের দাম বাড়ায় দুধ উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। উপজেলায় প্রতিদিন ৫৭২০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। কম খাদ্য খাওয়ানোর ফলে দুধ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। খাদ্যের অভাবে পশুগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে ওজন কমে যাচ্ছে। খামারি লোকসানের কারণে খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উন্নত ঘাস চাষের মাধ্যমে খরচ কমবে এবং গো-খাদ্যের সংকটও সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত