গুণী শিল্পী কায়ছার-সুফিয়ার মানবেতর জীবনযাপন

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৫৪ |  আপডেট  : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৪:১৯

জারিগান,সারিগান,পালাগান সহ বিভিন্ন গানে সুখ্যাতি অর্জন করা ৭০ দশক থেকে ৯০ দশকের সে সারাজাগানো গুণী অতিজনপ্রিয় শিল্পী কায়ছার আলী বয়াতি ও তার স্ত্রী সুফিয়া বয়াতি দম্পতি বর্তমানে আর্থিক সঙ্কটে কুড়ে ঘরে চরম দুরাবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পশ্চিত ঢাকারোডে সওজের জায়গান একটি কুড়ে ঘরে বসবাস করে অতি কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

কায়ছার আলী বয়াতি ও স্ত্রী সুফিয়া বয়াতি তৎসময়ে পাড়ামহল্লা, গ্রামগঞ্জে জারি, সারি,পালাগান গেয়ে মাতিয়ে রাখতে সকলকে। আজ বয়সের ভারে আর গান গাইতে পারে না তারা। বর্তমানে কায়ছার আলী বয়াতির বয়স ১১০ বছর,আর তার স্ত্রী সুফিয়া বয়াতির বয়স ৯৫ বছর। এখন তারা বয়সের কারনে গান গাইতে পারে না জন্য কেউ আর তাদের খবর রাখে না। এই দম্পতি এক সময় গান গেয়ে সুখ্যাতি অর্জন করে সুখে শান্তিতে ছিলেন। অনেকই তাদের সুখে দুঃখে পাশে ছিলেন। এখন আর কেউ তাদের পাশে নেই। বর্তমানে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সেই গুণী শিল্পী কায়ছার আলী বয়াতি জানান,তিনি ১৯১২ সালে নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকে তিনি পালাগান চর্চা করতেন। এক পর্যায়ে সে এলাকায় শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বিভিন্ন পাড়ামহল্লা,গ্রামগঞ্জে গানের জন্য হাক-ডাক আসতে শুরু হয়। তার গানের কারনে এলাকায় সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। 

কায়ছার আলী বয়াতি গ্রামের বাড়ী পারইলে থাকা কালে তিনি বিয়ে করেন। সংসার জীবনে চার সন্তান জন্ম নেয়।  এরপর কায়ছার আলী বয়াতি সুফিয়া নামের এক নারীকে  তার পালা গানের দলে নেয়। একপর্যায়ে সুফিয়াকে সে দ্বীতিয় বিয়ে করে উপজেলার সান্তাহার পশ্চিম ঢাকারোডে সড়ক জনপদের জায়গায় অস্থায়ী ঘর করে বসবাস শুরু করেন। বিয়ের পর কায়ছার আলী বয়াতি দ্বীতিয় স্ত্রী সুফিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পালা গান গাইতে শুরু করলে আরো সুনাম ছড়িয়ে পড়ে । তাদের পালা গানের সুনাম সুখ্যাতির কারনে  ‘কায়ছার সুফিয়া’নামটির পরিচিতি ঘটে দেশব্যাপী। কায়ছার সুফিয়ার সংসার জীবনে চার সন্তান জন্ম নেয়। তাদের সংসার খুব ভাল ভাবেই চলতে থাকে। কায়ছার সুফিয়া দম্পতির পালা গানের পাশাপাশি তাঁরা লালনগীতি, পাঞ্জুগাহ ও হালিম সঙ্গীত গানের সুনামও ছিল। কে বলে মানুষ মরে,সাধূ গঞ্জে যাবি যদি,সত্য তত্ব বিধান পরের কাছে সহ বেশ কিছু গানের জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন।  

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক সময়ের গুণী শিল্পী কায়ছার আলী বয়াতি আরো জানান, আমার এই করুন মানবেতর জীবনযাপনের খবর পেয়ে আদমদীঘি উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু শীতের কয়েকটা কম্বল, চাল,ডাল,তেল,একটি হুইল চেয়ার সহ নগদ কিছু টাকা দিয়ে গেছে। শেষ সময়ে চাওয়া পাওয়া সর্ম্পকে জানতে চাইলে কায়ছার দম্পতি এই প্রতিবেদককে বলেন,আমাদের তেমন বড় কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। আমরা শুধু একটি স্থায়ী ঘর চাই’যেন মৃত্যু আগে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পাড়ি। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত