গণমুখী অবাণিজ্যিক শিক্ষাই উন্নত রাষ্ট্রের প্রধান শর্ত

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:৪০ |  আপডেট  : ৩ মে ২০২৪, ০১:০৭

রাজনৈতিক প্রয়োজনীয় সাক্ষরতার হার বাড়লেও মান বাড়েনি। মানসম্মত শিক্ষা জনগণের নাগালে নেই।শ্রেণিবৈষম্যের ঊর্ধ্বে সর্বজনীন গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চাই আমরা। কারণ গণমুখী অবাণিজ্যিক শিক্ষাই একটি উন্নত রাষ্ট্রের প্রধান শর্ত।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত 'সার্বজনীন গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি: বর্তমান প্রেক্ষিতে নাগরিক ভাবনা' -শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা।  এই সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি আন্দোলন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। তিনি বলেন, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল বিকাশের জন্য চাই রাষ্ট্রের উদ্যোগ। শিক্ষাক্ষেত্রে এখনও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও সবচেয়ে কম। আর চাই বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতা ক্ষমতাসীনের বিপরীতে কথা হলেই যদি জেল-জুলুম হয়, সেখানে জ্ঞানচর্চার বিকাশ হতে পারে না। অর্থাৎ শিক্ষানীতি ও শিক্ষাদর্শন হবে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক ইহজাগতিক এবং স্বাধীন।

বাংলাদেশ শিক্ষা ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য তুলে ধরে কাবেরী গায়েন বলেন, বর্তমানে দেশে নয় হাজার ২৬৮টি আলিয়া মাদরাসা রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৬২ হাজার ২৭৭ জন। ২০২২ সালে জাতীয় সংসদে দেওয়া শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির তথ্যানুযায়ী কওমি মাদরাসা আছে ১৯ হাজার ১৯৯টি। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪ লাখের মতো।

তিনি বলেন, কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন-২০১৮ এর জন্য ছয়টি শিক্ষাবোর্ডকেও স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এছাড়া হাফেজিয়া, এবতেদায়ি, ফোরকানিয়া মাদরাসাগুলো বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থী রয়েছে। ফলে সঠিক শিক্ষার্থী সংখ্যা জানাটা দুষ্কর।

২০১০ সালে প্রণীত বর্তমান শিক্ষানীতি শিশুদের শারীরিক-মানসিক বিকাশে যুতসই নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক সম্ভাবনা সত্ত্বেও ২০১০ সালের শিক্ষানীতি সঙ্গে নিয়েই বাংলাদেশে গত ১২ বছরে শিক্ষাখাতের সমস্যা প্রকট হয়েছে। এ নীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্টরা অবশ্য ঘোষিত নীতির অনেক সুপারিশ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়াকেই দায়ী করেন।

কাবেরী গায়েন আরও বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার কথা ছিল, তা এখনও চালু করা হয়নি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনজিও বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে চালানো হয়, যা হয় খুব ব্যয়বহুল নয়তো নিচু মানের সেবা প্রদানকারী। এক কথায় এ শিক্ষানীতি শিশুদের মানসিক-শারীরিক বিকাশের জন্য যুতসই না।

তিনি বলেন, গত ১০-১২ বছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং শ্রেণি কক্ষের জন্য পৃথক পদ তৈরি করা ছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিন্ন মান বজায় রাখা বা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখার জন্য মন্ত্রণালয় কোনো নির্দিষ্ট আদেশ প্রচার করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, অবকাঠামোর অভাবে সর্বজনীন এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। আবার পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণি শেষ করে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) চালু হওয়ায় প্রক্রিয়াটি আরও জটিল হয়েছে। প্রথম থেকেই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে আসছেন যে, ১১-১২ বছর বয়সে পাবলিক পরীক্ষায় বসলে শিশুদের ওপর ক্ষতিকর মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে এবং তা তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করতে পারে।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন বলেন, তৎকালীন উচ্চশিক্ষার দর্শন মুক্তিকামী ছিল বলেই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতা এবং বৈষম্য শিক্ষানীতিকে গ্রাস করেছে।

এ সময় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাহমুদ সেলিম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকবর, সাংবাদিক নেতা ও দৈনিক কালবেলার বার্তা সম্পাদক রাজু আহমেদ প্রমুখ।  

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত