খালেদা জিয়ার মৃত্যু,ত পাকিস্তান-ভারত-চীনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র-সরকার প্রধানদের শোক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:১১ |  আপডেট  : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৩৯

-সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং ঢাকার বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শোক প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ইরান, থাইল্যান্ড, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কূটনৈতিক মিশনগুলো শোক প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তার পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আসিফ আলী জারদারি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব এবং ত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পরপরই শোক জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি খালেদা জিয়ার আজীবন ত্যাগ এবং দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদানের কথাও স্মরণ করেন। শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া পাকিস্তানের একজন নিবেদিতপ্রাণ বন্ধু ছিলেন এবং পাকিস্তান সরকার ও জনগণ শোকের এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে।’

শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমরা এ কঠিন সময়ে খালেদা জিয়ার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে রয়েছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন তার আত্মাকে শান্তি দান করেন। আমিন।’

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঢাকায় মৃত্যুর খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত।’

মোদি লিখেছেন, ‘তার পরিবার এবং বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। এই শোকাবহ ক্ষতি সহ্য করার শক্তি যেন সর্বশক্তিমান তার পরিবারকে দেন। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির উন্নয়নে, পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান সব সময় স্মরণ করা হবে।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে মোদি লিখেছেন, ‘২০১৫ সালে ঢাকায় তার সঙ্গে উষ্ণ সাক্ষাতের কথা আমার মনে আছে। আমরা আশা করি, তার দৃষ্টিভঙ্গি ও উত্তরাধিকার আমাদের পারস্পরিক অংশীদারত্বকে ভবিষ্যতেও পথ দেখাবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকার ও খালেদা জিয়ার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সহানুভূতি জানান।

লি কিয়াং লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে আমি গভীরভাবে শোকাহত। চীন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সহানুভূতি জানাচ্ছি।’

লি কিয়াং লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এবং চীনের জনগণের পুরোনো বন্ধু। তার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব, সমতা ও পারস্পরিক সুফলের ভিত্তিতে সর্বাত্মক সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে চীনের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা হয়।’

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে খালেদা জিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করেন।

ওয়াং ই বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ছিলেন, যিনি চীনের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব, সমতা ও পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। চীন সরকার চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে উচ্চভাবে মূল্যায়ন করে।

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়া তার দেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে তার নেতৃত্ব বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ঢাকার জার্মান দূতাবাস। শোক বার্তায় জার্মান দূতাবাস বলেছে, বেগম জিয়া তার দীর্ঘ জনজীবনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

জার্মানি কয়েক দশক ধরে তার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্মরণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে— ২০০৪ সালে ঢাকায় তৎকালীন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোশকা ফিশারের সাক্ষাৎ, ২০১১ সালে বেগম জিয়ার রাষ্ট্রীয় সফরের সময় জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান উলফের সঙ্গে বৈঠক। এ ছাড়া তিনি বছরের পর বছর ধরে জ্যেষ্ঠ জার্মান প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জড়িত ছিলেন।

ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মিশন বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে। ইইউ জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার জীবন ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিশেষ অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ঢাকার ফরাসি দূতাবাস শোকবার্তায় জানিয়েছে, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই শোকের সময় তার পরিবার, রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের সমবেদনা। তার স্থায়ী প্রভাব স্মরণীয় থাকবে।

যুক্তরাজ্য হাইকমিশনও গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত।

অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। এক বার্তায় তারা লিখেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, নেত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমাদের চিন্তা ও সমবেদনা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে রয়েছে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ঢাকার জাতিসংঘের অফিস এক শোক বার্তায় বলেছে, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতিসংঘ গভীর শোক প্রকাশ করছে। এই দুঃখজনক মুহূর্তে জাতিসংঘ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে তার সংহতি পুনর্ব্যক্ত করছে।

ঢাকার ইরান দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং তার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশ-ইরানের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক।

ইরান দূতাবাসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রখ্যাত জাতীয় নেতা ছিলেন, যিনি গণতান্ত্রিক শাসন ও জনগণের জীবনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার দায়িত্বকালীন সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত