কুমিল্লার ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক, কয়েকজনকে চিহ্নিত

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৫২ |  আপডেট  : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯

কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে যারা ফেসবুকে গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা  রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

কুমিল্লার ঘটনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ফেসবুকে দেখলাম পুলিশের আইজির ভুয়া আইডি থেকে ‘পূজা বন্ধের নির্দেশনা’ দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের কোনও নির্দেশনা আমরা দেইনি। যারা এই ধরনের অপচেষ্টা করছেন বা করে যাচ্ছেন, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।  কোনও বিশৃঙ্খলাকারীকে এই ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত হতে দেব না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেনও কেউ গুজব না ছড়ায়।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে। জড়িতদের সবাইকে আমরা অবশ্যই খুঁজে বের করবো। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি। আমরা মনে করছি খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টাও আমরা দেখেছি। যারা এই ধরনের চেষ্টা করছেন কিংবা অব্যাহত রাখবেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। যদি কেউ উস্কানি দিয়ে থাকে বা ষড়যন্ত্র করে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। এটা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সব জায়গায় প্রচারিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। সেই প্রেক্ষিতে হৃদয়বিদারক কিছু ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে চারজন মানুষের নিহত হওয়ার দৃশ্য দেখেছি। সিলেটের জকিগঞ্জ, চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য সারারাত কাজ করেছে। আজ আমরা এখানে বসেছি। যে চারজন নিহত হয়েছেন, সেখানে কারও গাফিলতি যদি থেকে থাকে, আমরা সেটাও দেখছি, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করছি—এটা উদ্দেশ্যমূলক, কোনও ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীর কাজ। তদন্ত শেষে আমরা সব ঘটনা জানাতে পারব। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী যেখানেই যেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারি—যারা ধর্মকর্ম করেন, যারা ধর্মকর্মে বিশ্বাস করেন, তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারেন না। আমাদের দেশে যে সাম্প্রতিক মেলবন্ধন আছে, সেটা বিনষ্ট করার জন্য একটা প্রচেষ্টা বলে আমরা মনে করি।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের একটা সিদ্ধান্ত ছিল—যেখানে পূজা হবে সেখানে সিসিটিভি বসাবে এবং আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদেরও ভলান্টিয়ার থাকবে, কিন্তু অনেক পূজামণ্ডপে সেগুলো করেনি। আমি আবার আহ্বান করছি—সমস্ত পূজামণ্ডপে যেন সিসিটিভি এবং নিজস্ব ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত যেনও কোনও বিশৃঙ্খলা না হয়, সেজন্য সবাই যেন ধৈর্য সহকারে, আমাদের যে ঐতিহ্য সবাই যেন মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখে। কোনও উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’

মন্দিরে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য না থাকা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এবার কোভিডের কারণে টহলে রাখার সিদ্ধান্ত হয় হয়। আজ আবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে প্রয়োজন সেখানেই আনসার বাহিনী চলে যাবে। ’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সারাদেশে বেশকিছু বিশৃঙ্খলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। যেখানেই বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে সেখানেই গ্রেফতার করা হবে। আমরা চাই— সুনির্দিষ্টভাবে যারা জড়িত ছিল বা উস্কানি ছিল তাদের গ্রেফতার করতে।’

কয়েকটি জেলায় বিজিবি মোতায়েন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়। যদি মনে করা হয়, বিশৃঙ্খলা হতে পারে তখন ডিসির অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বিজিবি আসে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত