কালের বির্বতনে বিলুপ্তির পথে লাঙ্গল জোঁয়াল মই-হালের বলদ
প্রকাশ: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:২২ | আপডেট : ১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৯
“সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা, দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা” এমনটাই লিখেছিলেন রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী তার ‘চাষী’ কবিতায় কিন্তু বর্তমান প্রে¶াপটে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় এ ধরনের কবিতা গুলোর সাথে এখন বাস্তবতার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতায় উপজেলার মানুষ এখন দিন দিন যন্ত্র নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে যান্ত্রিক ক্রুটির সাথে সাথে জীবন যাত্রার ক্রুটিও বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। কৃষি নির্ভরশীল এবং সূতা দিয়ে কাপড় তৈরীতে বেশ খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করলেও এখানকার ৯০ ভাগ মানুষই এক সময় কৃষি নির্ভরশীল ছিল। প্রাচীনকালের লাঙ্গল,জোঁয়াল ও মই কৃষি যন্ত্র হলেও আদমদীঘিতে এর ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে।
জমি চাষের কাজে এ উপজেলা সহ এর আশপাশের কৃষকেরা এক সময় কাঠের তৈরী লাঙ্গল, জোঁয়াল, মই ও হালের বলদ ব্যবহার করতো। ফসলি জমিতে চাষাবাদের জন্য এসব কৃষি উপকরণ হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহার করে এসেছে কৃষকরা। কিন্তু কালের বিবর্তনে আদমদীঘিতে আজ এসব ঐতিহ্যবাহী জিনিস এর ব্যবহার প্রায় বিলুপ্তির পথে। পরিবেশ বান্ধব লাঙ্গল-জোঁয়ালের স্থান দখল করে নিয়েছে পরিবেশ ও শব্দ দূষণকারী আধুনিক প্রযুক্তির তৈরী যান্ত্রিক পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর। আগে লাঙ্গল-জোয়াল ছাড়া চাষাবাদের কথা চিন্তাই করতে পারতো না উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু আধুনিক যুগে যুগের সাথে তাল মেলাতে চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারের মতো যান্ত্রিক সব উপকরণ আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে কৃষক যেমনি উপকৃত হয়েছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্থও হয়েছে। যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ ও বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিকের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে যন্ত্রচালিত কৃষি উপকরণগুলো। আর এসব আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে চাষাবাদে আগের তুলনায় সময়, শ্রম এবং অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে কৃষক আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদ করে জমিতে ফসল ফলাচ্ছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল, জোঁয়াল, মই ও হালের বলদ।
বর্তমানে আদমদীঘি উপজেলার প্রায় সব কৃষকই জমি চাষের জন্য পাওয়ার টিলার তৈরী বা ট্রাক্টর ব্যবহার করে থাকে। লাঙ্গল-মই সহ কৃষি সরঞ্জাম তৈরি করা যাদের পেশা তারা এখন বেকার হয়ে পড়েছে। এ পেশায় যারা জড়িত তাদের অনেকেই বাপ দাদার এ আদি পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন । সময়ের বির্বতনে হাজার বছরের পুরোনো মই,লাঙ্গল-জোঁয়ালের স্থান হবে জাতীয় জাদুঘরে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা গল্প হয়ে থাকবে। এই উপজেলায় কম বেশি সব গ্রামেই দেখা যেতো লাঙ্গল, জোঁয়াল ও হালের বলদ কিন্তু এখন আর চোখে পড়ে না। আদমদীঘি উপজেলার কেশরতা গ্রামের কৃষক চ ল হোসেন জানান, তার বাপ-দাদাদের স্মৃতি বিজড়িত লাঙ্গল, জোয়াল, মই এখন আর তেমন একটা কাজে আসে না। তিনি আরো বলেন এখন শুধুমাত্র বীজতলা তৈরী করার জন্য লাঙ্গল- জোঁয়াল ব্যবহার করে থাকি। আধুনিক সভ্যতা থেকে পরিবেশ বান্ধব লাঙ্গল-জোঁয়ালের জায়গা দখল করে নিয়েছে যান্ত্রিক পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর সহ বেশ কিছু মেশিন।
আদমদীঘি উপজেলার রক্তদহ বিল ঘেষা করজবাড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, আগে লাঙ্গল, জোয়াল, মই ও হালের বলদ দিয়ে জমি চাষাবাদ করে কৃষকেরা যে আনন্দ পেত এখন আর তা নেই। তবে বাপ-দাদার সেই পুরোনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য এখনো বাড়িতে লাঙ্গল, জোয়াল, মই ও হালের বলদ রাখা হয়েছে এবং মাঝে মধ্যে ব্যবহার করি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত