বজ্রপাত থেকে রক্ষাকারী পরম বন্ধু
কাউনিয়ায় তিস্তা সড়ক সেতুর কাছে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন তালগাছ
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৩৫ | আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২০
বাংলা সাহিত্যে, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে, রবীন্দ্রনাথের এ কবিতা যেন আমাদের গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। এছাড়াও খান মুহাম্মদ মইনুদ্দীনের, ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ। ঐ খানেতে বাস করে, কানা বগীর ছা। শিশু মননের তালগাছ কেন্দ্রিক আরেক আলোড়িত ছড়া। তাল গাছকে নিয়ে কবি তাঁর কল্পনার রং লাগিয়ে গান-কবিতা লিখলেও তা ছিল গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশের বাস্তব চিত্র।
সরেজমিনে এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানাগেছে কাউনিয়ায় আশির দশকেও প্রায় বাড়িতে ও রাস্তা ঘাটে তাল গাছ ছিল। এই গাছে বাবুই পাখির ঝুলানো বাসা দেখলেই মনে হত বিশ্ব বিখ্যাত কোন শিল্পির শিল্পকর্ম। সকাল সন্ধ্যায় পাখির কিঁচির মিচির শব্দ প্রকৃতিতে অন্য রকম আবহ তৈরী করত। এমন সুন্দর ও নৈসর্গিক দৃশ্য এখন খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত থেকে রক্ষাকারী পরম বন্ধু তালগাছ। এ কারণে বজ্রপাতের (বিদ্যুৎস্পর্শ) হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ, পশু-পাখিসহ জীববৈচিত্র। তালগাছের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় যে বিশাল ভূমিকা আছে এবং পরিবেশবান্ধব, তালের উপকার সম্পর্কে না জানায় তালগাছ ইটভাটায় জ্বালানি, ঘর তৈরির উপকরণসহ নানান কাজে ব্যবহারের জন্য নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু নতুন করে তাল গাছ লাগানোর কোনো উদ্যোগ নেই। এ কারণে দিন দিন প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এরপরও কাউনিয়ায় গৃহস্থের বাড়ীতে তাল গাছ চোখে না পড়লেও রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের তিস্তা সড়ক সেতুর পাশে ছোট ও মাঝারী প্রায় শতাধিক তাল গাছ এক অপরুপ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে যা যে কোন পথচারির নজর কারে। যথাযথ নজরদারি ও রক্ষনা বেক্ষনের অভাবে সে গুলো হুমকির মুখে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় কিংবা অন্য কোন সময়ে ডাল পাতা কেটে সাবার করছে এক শ্রেনির মানুষ। কচিঁ তালের বিচি প্রচন্ড গরমের মধ্যে সকলের প্রিয় খাবার, শুধু কি তাই তাল পিঠা বাংলার গ্রাম গঞ্জে সমান জনপ্রিয়, এছাড়াও তালপাতা দিয়ে হাত পাখা, হাতব্যাগ, ঝুড়ি সহ গৃহস্থীর নানা উপকরন তৈরী করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানাজ পারভীন জানান, তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে গিয়ে আমাদের রক্ষা করে। এ ছাড়াও ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। তালগাছের আকর্ষণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা, ঘটে বৃষ্টিপাতও। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান আমাদের দপ্তর থেকে তাল গাছ রোপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নির্বাহী অফিসার তাহমিনা তারিন জানান, তালগাছ প্রকৃতির বন্ধু ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী বৃক্ষ। প্রকৃতির জীববৈচিত্র রক্ষায় বাড়ির আঙিনার পাশে, রাস্তার ধারে, অনাবাদি ও পতিত জমিতে ব্যাপকভাবে তালগাছ রোপণ করা উচিত। রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের তাল গাছ গুলো রক্ষনা বেক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আসুন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অন্তত একটি তালবীজ বপন করি। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবক এবং সরকারীভাবে একটু উদ্যোগ নিলেই বদলে যাবে আমাদের চিরপরিচিত পরিবেশ। সারাদেশে গড়ে উঠুক তালগাছে প্রকৃতির সবুজ বেষ্টনী।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত