কাউনিয়ায় চরাঞ্চলের জাহাজ ঘোড়া গাড়ি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নব দিগন্তের সূচনা করেছে

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি  

প্রকাশ: ৯ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০৪ |  আপডেট  : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৮

উন্নয়ন বঞ্চিত উপজেলা হিসেবে পরিচিত রংপুরের কাউনিয়ায় ঘোড়া গাড়ি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরের জাহাজ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিভিন্ন চরে ঘোড়া গাড়ির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে কর্মসংস্থানের নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে। 

সরেজমিনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তিস্তা নদী বেষ্টিত ১৭টি চরা লের গ্রাম চর নাজিরদহ, চর সাব্দি, গোপিডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, তালুকশাহাবাজ, চর গনাই, চর গদাই, হরিচরন শর্মা, চর গনাই, চর বিশ্বনাথ, হয়বতখাঁ চর, টাপুর চর, সদরা তালুক, চর আজমখাঁ ঘুরে দেখাগেছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় একমাত্র বাহন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে পরিবেশ বান্ধব ঘোড়ার গাড়ি। বালু আর মরা তিস্তার শাখা নদীর রাস্তাসহ কাঁদা রাস্তায় যেখানে ভ্যান, রিক্সা, ট্রলী, ট্রাক যেতে পারে না সেই সকল রাস্তার জনপ্রিয় বাহন হিসেবে ঘোড়া গাড়ির কদর বেড়েছে। 

উপজেলার সিংহ ভাগ রবি শস্য, ধান, পাট, আলু, বাদাম, ভুট্টা, পিয়াজ,মরিচ, ডাল এসব অর্থকারী ফসল চরা লেই বেশী উৎপাদন হয়। কৃষকের উৎপাদিত ফসল হাটে নিয়ে যেতে না পারায় কম দামে ফড়িয়া দালালদের কাছে বাধ্য হয়েই চরেই বিক্রয় করতে হতো। বর্তমানে ঘোড়ার গাড়ি চালু হওয়ায় কৃষক এখন তার উৎপাদিত ফসল হাটে নিয়ে গিয়ে ন্যায্য দামে বিক্রয় করছে। কাউনিয়ায় এসব চরা লে প্রায় ৪ শতাধিক ঘোড়া গাড়ি রয়েছে। কাউনিয়ায় থানা রোডে হারাগাছ ইউপির চর নাজিরদহ গ্রামের ঘোড়া গাড়ি চালক জিল্লুর রহমান জানায় এক সময় তার সংসার চলতো না, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছে পরিবার পরিজন নিয়ে। ঘোড়া গাড়ি চালান শুরুর পর থেকে তার সংসারে এখন তেমন অভাব নেই। 

পল্লীমারী একতা গ্রামের ঘোড়া গাড়ি চালক গনি মিয়া জানায়, প্রায় ৫বছর থেকে সে ঘোড়া গাড়ি চালায়, তার দৈনিক আয় ৭থেকে ৮শত টাকা, তবে আলুর মৌসুমে আয় আরও বেশী হয়। একই কথা জানালেন ঘোড়া গাড়ি চালক আঃ খালেক ও নুর নবী। ঘোড়ার পিছনে তাদের এক থেকে দেড়শ টাকা খাদ্য বাবদ ব্যয় হয়। ঘোড়া গাড়ির চাকা তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে আছে। ঘোড়া গাড়ির ব্যাপারে হারাগাছ ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ জানান তাঁর ইউনিয়নে দেড়শতাধিক ঘোড়া গাড়ি আছে। বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান তার ইউনিয়নে ৫০ থেকে ৬০টি ঘোড়া গাড়ি আছে। 

টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান তার ইউনিয়নে শতাধিক ঘোড়া গাড়ি আছে, শহীদবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ হান্নান জানান তার ইউনিয়নে ৩৫ থেকে ৪০টি ঘোড়া গাড়ি রয়েছে। আজ থেকে বছর চার পাঁচ আগেও এ উপজেলায় ঘোড়া দেখা যেতনা, এখন প্রায় গ্রামে ঘোড়া গাড়ি হয়েছে। সেই সাথে ঘোড়া গাড়ি যোগাযোগের জন্য চরা লের জাহাজ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এবং কর্ম সংস্থানের নব দিগন্তের সৃষ্টি হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত