গরীবের এসি বাড়ি নামে খ্যাত

কাউনিয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য কুঁড়ে ঘর হারিয়ে যাচ্ছে

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:৫৬ |  আপডেট  : ১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬

কবি রজনীকান্ত সেন ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় লিখেছেন, বাবুই পাখিরে ডাকি, বলছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্রালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে। রংপুরের কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়া-ঘেরা শান্তির নীড় কুঁড়ে ঘর। যা এক সময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে গরীবের এসি বাড়ি নামে পরিচিত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের আবর্তে আজ হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কুঁড়ে ঘর। 

সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ আর খরের ছাউনিতে তৈরী কুঁড়ে ঘর এখন আর চোখে পড়ে না। যদিও বা কালে ভাদ্রে এক-আধটি চোখে পড়ে তারও খুবই জীর্ণ দশা। আগে প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো কুঁড়ে ঘর। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী কুঁড়ে ঘর এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না। দেশের উন্নয়নের ধারায় বিভিন্ন উপজেলায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়ে ঘর। আমাদের প্রজন্মকে হয়তো বা কুঁড়ে ঘর চেনার জন্য যাদুঘরে যেতে হবে। বেশি দিন আগের কথা নয়, প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়ত অসংখ্যে কুঁড়ে ঘর। অত্যন্ত আরামদায়ক আবাস কুঁড়ে ঘর দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। প্রভাবশালীরা কাচারী ছিল কুঁড়ে ঘরের। এখন কুঁড়ে ঘরের পরিবর্তে নির্মাণ করা হচ্ছে টিন বা ইটের তৈরি পাকা দালান। কুঁড়ে ঘরগুলো গরমে শীতল আর শীতে ছিল উষ্ণ। 

তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নত হয়েছে। দেশে এখন আর কুড়ে ঘর খুঁজে পাওয়া যায় না। কুড়ে ঘর এখন পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের কবিতার মধ্যে আছে। কবিগুরু তার কবিতায় লিখেছিলেন, একটুখানি হাওয়া দিলে ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে। চৈত্রের তাপদাহ আর জ্যৈষ্ঠের প্রখর গরমে একটু বিশ্রামের আশায় রংপুর অ লের মানুষ যখন কুঁড়ে ঘরে আশ্রয় নিত তখন সেই কুঁেড় ঘরই ছিল এ অ লের মানুষের শান্তির স্বর্গ আর রাতে মাথা গোজবার একমাত্র ঠাঁই। গ্রাম বাংলার এ সব দৃষ্টি নন্দন কুঁড়ে ঘর দেশের অভিজাত এলাকার চিলে কোঠায় বা সুইমিংপোলের পাশে শোভা পাচ্ছে এখন। উপজেলার বনগ্রাম গ্রামের গোপাল চন্দ্র জানায় খর ও বাশের দাম বেশী হওয়ায় এবং প্রতি বছর কুঁড়ে ঘর মেরামত করতে হয় তাই গ্রামের মানুষ এখন কষ্ট করে টিনের ঘর তুলেছে।

 চর ঢুসমারা গ্রামের তাজুল ইসলাম জানায় কুঁড়ে ঘরে অনেক শান্তি। তিনি জানান কুঁড়ে ঘর হলো গরীবের বিশেষ করে চরে মানুষের এসি-ঘর। কুঁড়ে ঘরে গরমে যেমন শীতল ছাঁয়া আবার শীত কালেও এ ঘর থাকে উষ্ণ। গ্রামের ঐতিহ্য কুঁড়ে ঘর এখন স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য সংরক্ষন করা পওয়োজন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত