ভেষজগুন সম্পন্ন ঔষধী ফল লেবু চাষ
কাউনিয়ায় কৃষিতে সফলতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেলোয়ার
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৯ | আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:১৬
রংপুরের কাউনিয়ার শহীদবাগ ইউনিয়নের বল্লভবিষ্ণু গ্রামের দেলোয়ার হোসেন। স্ত্রী দুই ছেলে এক কন্যা নিয়ে অভাবের সংসার। ১৫ শতক বাড়ি ভিটা ছারা আর কোন জমি ছিল না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে ভাগ্য বদলের আশায় বাড়ি ভিটার সাথে ১০ শতক জমিতে শুরু করেন লেবু চাষ। স্বামী স্ত্রী মিলে অদম্য পরিশ্রম আর কৃষির প্রতি ভালো লাগা কাজে লাগিয়ে দ্রুতই সফল হয়েছেন। বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে লেবু। প্রতিটি গাছে ১০০-১৫০টি করে ফল ধরেছে।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় লেবু চাষে সফল চাষি দেলোয়ারের সাথে। তিনি জানান ২০০১ সালে তিনি কৃষি বিভাগের সহায়তা ছারাই প্রথম লেবু বাগান করেন। প্রথমে অনেক সমস্যায় পরি যেমন মাকরসা, পাতা খাওয়া পোকা, কালো পিপড়া, কারেন্ট পোকা এসব নিয়ে। পরে স্থানীয় ঔষুধ ব্যবসায়ীর পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের স্প্রে করে তা থেকে রেহাই পাই। বাগানে আমি এবং আমার স্ত্রী মিলেই পরিচর্যা করি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। গাছ লাগনোর ১বছর পর থেকেই ফল ধরা শুরু হয়। সপ্তাহে দুই দিন বাগান থেকে লেবু তুলে বাজারে গিয়ে নিজেই বিক্রি করি। আমার বাগানের লেবুর সাইজ ভাল ও প্রচুর রস এবং সুগন্ধি হওয়ায় সবার মুখে মুখে প্রচার হয়ে যায়। এরপর থেকে পাইকাররা এসে বাগান থেকে লেবু কিনে নিয়ে যায়। তারপর ভেলু পাড়া এলাকায় নাছির উদ্দিন মাষ্টার থেকে বছরে ৪০হাজার টাকা দেয়ার শর্তে ৯০ শতক জমি লীজ নিয়ে চায়না-৩ বা বারোমাসি লেবু বাগান গড়ে তুলি। সঠিক জাত নির্বাচন, উন্নত চাষ পদ্ধতি অনুসরণ এবং বাজারজাত করণের ব্যবস্থা থাকলেই লেবু চাষে সফল হওয়া সম্ভব। লেবু গাছ সারা বছর ফল দেয়, যা কৃষকদের জন্য লাভজনক। দেলোয়ার সফলতার কারণ সম্পর্কে জানান, চায়না-৩ ও বারোমাসি লেবু বছরের প্রায় সব সময়েই ফল দেয়। দেশে লেবুর চাহিদা প্রচুর এবং বাজারও বেশ ভালো। পাইকারি বিক্রেতারা সরাসরি বাগান থেকে লেবু কিনে নেন, ফলে বাজারজাতকরণের ঝামেলা নেই। একবার চারা রোপণ করলে ১৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। লেবু চাষের পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে সহজ। তিনি ৯০ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করছেন। চারা ক্রয়, গর্ত তৈরি, সার ও অন্য খরচ মিলে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তার বাগানে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন লেবু কিনতে। চলতি মৌসুমে লেবুর চাহিদা ভাল। তার ১০০ লেবু ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ লেবু বিক্রি করে বছরে কর্মচারি ঔষধ অনান্য খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ১লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। ভালো ফলন পেতে উন্নত ও আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। নিয়মিত সার, সেচ এবং গাছের রোগ ও পোকা-মাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ জানায়, লেবু চাষে খরচ কম, লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। চারা লাগানোর ১ বছর পর থেকেই ফলন পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যায় একবার চারা রোপণের পর অন্তত ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সারাবছরই লেবুর চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন ভাইরাস প্রতিরোধে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লেবু অনেক উপকারী। তাই বাজারে এর চাহিদা অনেক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আকতার জানান, রমজানে দেশব্যাপী লেবুর চাহিদা বৃদ্ধি পায় তখন বাজারে দামও ভাল পায় চাষি। কাউনিয়ার মাটি লেবু চাষের জন্য উপযোগী। লেবু চাষের মৌসুম হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময় প্রচুর লেবু উৎপাদিত হয়। শুকনো মৌসুমে লেবুর উৎপাদন প্রাকৃতিক কারণেই কমে যায়। দেলোয়ার লেবু চাষ করেই সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন, মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, দুই ছেলে এখন চাকরি করে। পরিবারে ফিরেছে সুদিন। পাশাপাশি অন্যদেরও সুযোগ হয়েছে কর্মসংস্থানের।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত