চুক্তির বাস্তবায়ন ও ড্রেজিং করা প্রয়োজন
কাউনিয়ায় এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন মরা গাং
প্রকাশ: ৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৪৩ | আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৪
হিন্দু পুরান অনুযায়ী তিস্তা নদী দেবী পার্বতীর স্তন থেকে উৎপন্ন। তিস্তা নামটি এসেছে ত্রি-সেতারা বা তিন প্রবাহ থেকে। সিকিম হিমালয়ের ৭২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থতিত চিতাম্বু হ্রদ থেকে তিস্তা নদীর সৃষ্টি। ভারত থেকে বয়ে আসা তিস্তা নদী নিলফামারী জেলার খড়িবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যা বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত নদী হিশেবে পরিচিত। এক কালের খরস্রোতা তিস্তা নদী রংপুরের কাউনিয়ার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজারহাট উপজেলায় চলে গেছে। সেই তিস্তা এখন পানি শুন্য মরা গাং এ পরিনত হয়েছে। তিস্তা কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অ ল উত্তর জনপদ। কাউনিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি ও মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম জল প্রবাহ তিস্তা নদী অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ভরা যৌবনা হয়ে বিভিন্ন নদী প্রবাহের মাধ্যমে গঙ্গার সাথে যুক্ত ছিল।
১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে বন্যার পর তিস্তা গতিপথ পাল্টে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে চিলমারী নদী বন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে যুক্ত হয়। ভরা নদী তিস্তার গতি-প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করে ভারতের পার্বত্য অঙ্গরাজ্য সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফলে যৌবনা নদী তিস্তা আজ মৃতপ্রায় গাং এ পরিনত। পরিণত হয়েছে ধু-ধু বালুচর আর ফসলের মাঠ। ভারতের পানিবণ্টন গড়িমসির কারণে প্রবাহমান তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন-যাত্রা এবং জীবন-জীবিকার হাহাকারেরও শেষ নেই। এ বছর পানি প্রবাহ অস্বাভাবিক ভাবে হ্রাস পেয়ে ডালিয়া পয়েন্ট থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ৭৫ কিঃমিঃ নদীর বুক জুড়ে ধু-ধু বালু চর পড়েছে।
তিস্তা নদীর উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাই গুড়ির গজল ডোবায় বাঁধ নির্মান করে পানি মহানন্দা নদীতে নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে তিস্তা নদী বর্তমানে কংকাল সার হয়ে মরা গাংএ পরিনত হয়েছে। ভারত তিস্তা থেকে পানি প্রত্যাহার করায় তিস্তা সেচ বাধ প্রকল্প প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নদীতে পানি না থাকায় জেলায় মৎস্য ঘাটতি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। জীব বৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। মৎস্য জীবিদের কর্মহীনতা, কৃষিতে সেচ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ লেগেই আছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবং স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ড্রেজিং না করায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বর্তমানে খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন মরা খালে পরিনত হওয়ার পর্যায়ে। নৌ চলাচলে বিরুপ প্রভাব পড়েছে।
নদীতে পানি না থাকায় চীলমারী ও বুড়িমারী বন্দরের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগে, মালামাল পরিবহন বন্ধ হয়েছে প্রায় দুই যুগ থেকে। নদীর পানির হ্রাস ও উজানের পাহাড়ি ঢলে বালু পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সুসাধু ও অনান্যে মাছ না হওয়ায় নদীকে ঘিরে শতশত জেলে পরিবার আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। নদী ড্রেজিং না করায় নদীর গতি পথ পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য বাঁক ও চরের সৃষ্টির ফলে বর্ষা কালে নদীর পানির ধারন ক্ষমতা কমে যায় এবং কাউনিয়ায় উভয় তীরের ৩৫ কিঃমিঃ এলাকা জুরে গ্রাম গুলো নদী ভাংগন ও বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। নদী পাড়ের মানুষ কোব্বাত ও জাহেদুল জানায় স্বাধীনতার পর এত কম পানি আর কখনো ছিল না। তিস্তার পানীর ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের কুটনৈতীক প্রচষ্টো চালানসহ আর্ন্তজাতীক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ এর দাবী এলাকাবাসীর।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত