করোনাকালের ঈদ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২১, ১২:১২ |  আপডেট  : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫

পবিত্র মাহে রমজান শেষে এসেছে আনন্দের ঈদ। আজ শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে কাল পালিত হবে ঈদুল ফিতর। অন্যথায় আগামী ১৪ মে শুক্রবার বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণীতে জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস রেকর্ডে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 

ঈদ মুসলিম জাতির জন্য এক অনাবিল আনন্দের পরশ নিয়ে সাধারণত আসে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিন মানুষ মেতে ওঠে হাসি আনন্দে। আত্মীয়-স্বজনের সাথে এ উপলক্ষে দেখা-সাক্ষাৎ ভাব বিনিময় হয়। একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নয়। ঈদ যে আনন্দঘণ পরিবেশ সৃষ্টি করে, অন্য কোনো উৎসবে তেমনটি হয় না। তাই মুসলমানগণ সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এ দিনটির। 

কিন্তু গত দুই বছর আমরা সে চিরাচরিত আনন্দ থেকে বি ত। বিশ্বগ্রাসী মহামারী করোনার কারণে ঈদের আনন্দ আগের মতো উপভোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরও কারোনার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথাও সুষ্ঠুভাবে ঈদ পালন করা যায়নি। এবারও ত্-াই ঘটছে। এবারও করোনার হানা ঈদ আনন্দকে খর্ব করেছে। করোনা সংক্রমণ ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এখনও পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতি ঈদে স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়র জন্য যারা গ্রামে ছুটে যেতেন তারা ভীষণ বিপাকে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছিলেন এই দুর্যোগময় সময়ে যে যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানেই ঈদ উদযাপনের। কিন্তু তার সে আহ্বানে কেউ যে সাড়া দেয়নি তার প্রমাণ মিলেছে গণপরিবহণ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও গ্রামমুখী মানুষের ঢলে। যে যেভাবে পেড়েছে রাজধানী ছেড়ে ছুটেছে গ্রামের পানে। এই ছুটে চলা যে নিকট ভবিষ্যতে মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে সে ভাবনা কারো মধ্যে দেখা যায় নি। স্বাস্থ্যবিধিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মানুষ অবুঝের মতো দৌড়েছে গ্রামের দিকে। দেশের ফেরিঘাটগুলোরে যে চিত্র সংবাদমাধমে প্রচার-প্রকাশ হয়েছে, তাতে বিব্কেবান মানুষ মাত্রই শিউরে উঠেছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, মানুষের এই অবাধ ছুটে চলার কুফল ঈদের দুই-তিন সপ্তাহ পরে টের পাওয়া যাবে। তারা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াবহতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। 

ঈদে পালন করার জন্য মানুষের এই অপরিনামদর্শী আচরণ সচেতন মানুষদের বিস্মিত করেছে। কেননা, একটি দুটি ঈদে গ্রামের বাড়িতে না গেলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত তা কারো বোধগম্য নয়। আমরা যে একটি অসচেতন জাতি এবারের ঈদযাত্রা থেকেই তা প্রমাণিত ।
 
তারপরও যেহেতু বছরের একটি প্রধান উৎসব এই ঈদ. তাই একে পালন না করলে মন খারাপ হওয়ারই কথা। আগের মতো ঈদ উৎসব পালন করতে না পেরে মনের মধ্যে আক্ষেপের সুর বেজে উঠাও অসঙ্গত নয়। কিন্তু তাই বলে মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে তা পালনে পাগলপ্রায় হয়ে ঊটতে হবে এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। 

এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, করোনা আমাদের অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পুজি হারিয়েছেন, শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাদের দুয়ারেও ঈদে এসেছে। কিন্তু ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সামর্থ্য তাদের নেই। তাই যারা বিত্তবান ও সচ্ছল, তাদের উচিত নিরন্ন এই মানুষগুলোর দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করা। তারাও যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বি ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব। 

করোনাকালের এই ঈদ ভালো কাটুক, সবাই ভালো থাকুন আমরা এই কামনা করি। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে এবং অপরের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই যেন আমরা ঈদ উদযাপন করি। সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত