জাল-জালিয়াতির নজিরবিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে প্রশাসনের নিকট
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ঘূষ গ্রহণ

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯:২২ | আপডেট : ৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৩

পঞ্চগড়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে জমিজমা বিষয়ে জাল-জালিয়াতি, ঘুষ গ্রহণ ও জমি রেকর্ডে কারসাজি সহ সরকারী নানা কাজের অভিযোগ এনে ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরিত অভিযোগ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ও প্রেসক্লাবে দাখিল করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, স্থানীয়দালালচক্রের সহায়তায় নানা কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে খতিয়ান সৃজন ও রেকর্ড কাটাছেঁড়ার মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে অবৈধ উপায়ে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়ে আসছে।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ওমর ফারুক আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্য এবং ছাত্রলীগের প্রভাবে চাকরীতে প্রবেশ করেন এমন দাবি করেন অভিযোগকারীরা;তবে এ বিষয়ে তারা প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।আগে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্বে থাকাকালে দালাল নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও তোলা হয় তার বিরুদ্ধে।
বর্তমানে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে রাতের বেলা অফিসের দরজা বন্ধ করে জাল কাগজপত্র তৈরির অভিযোগ আনা হয়; এ সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হওয়ার পর অফিসের এক পিয়নকে অন্যত্র বদলি করানোর কথাও অভিযোগে আনা হয়েছে। ওই ভূমি কমর্কর্তা ফারুকের গ্রামের ঠিকানা হিসেবে শালবাহান ইউনিয়নের টাইয়াগছ ফকিরপাড়া, পিতা চান মিয়ার নাম উল্লেখ রয়েছে।
নির্দিষ্ট কয়েকটি ঘটনার কথা তুলে ধরে অভিযোগকারীরা জানান, তেঁতুলিয়ার জনৈক জুয়েলের রেকর্ডে ৩ শতক জমি ৩৭ শতক দেখিয়ে ১১ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। আরও বলা হয়, নুরুল হক নুরু নামের এক ব্যক্তি সরকারের খাস জমি (১ নং খতিয়ানভুক্ত)কথিতভাবে ভারতে পলাতক আলাউদ্দিনের দখলে ছিল তা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী ভূমি কর্মকর্তার সহযোগিতায় পঞ্চগড় ডোকরোপাড়া এলাকার এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রী রেহেনা খাতুনের কাছে ৩৭ লাখ টাকায় বিক্রি করেন এবং সেই টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়। এসব লেনদেনে ভূমি অফিসের হেড ক্লার্ক লেমন, সার্ভেয়ারসহ কয়েকজন কর্মচারীর ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার অভিযোগও আনা হয়েছে।
রেকর্ড–খতিয়ান বিষয়ে অভিযোগকারীরা বলেন, তেঁতুলিয়া মৌজার কেস নং ঢওওও/৪৩/২০২৩–২৪–এর মাধ্যমে জেলা কালেক্টরেটের ১ নং খতিয়ানভুক্ত জমিতে ১০৪৮ নং ‘আল খারিজ’ খতিয়ান সৃজন দেখিয়ে পরবর্তীতে সেখান থেকে আরও ৭টি জাল খতিয়ান তৈরি করা হয়। অথচ ২০/১১/১৯৮৯ তারিখের খারিজ কেস নং ওঢ-ও/১২৬/১৯৮৯–৯০–এর ভিত্তিতে সৃজিত ১২৮ নং খারিজ খতিয়ান অনুযায়ী জমিটি বহু আগে থেকেই ভিন্ন ভিন্ন কবলামূলে ৩১ পরিবারের কাছে হস্তান্তর হয়; তারা নিজ নামে খতিয়ান খুলে ১৫–৩৫ বছর ধরে খাজনা দিচ্ছেন ও পাকা ঘরবাড়ি করে বসবাস করছেন। অভিযোগকারীদের ভাষ্য, ২৭/০১/২০০২ তারিখের স্মারক নং ৬৯(৩) ও মামলা নং ঢওও/৬৬/২০০১–০২–এর আদেশে ১০৪৮ নং খতিয়ান বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল; তবু পরবর্তীতে রেকর্ড কাটাছেঁড়া করে ১২৮ ও ১৮১ নং খতিয়ানভুক্ত অংশকে ‘পতিত/জনশূন্য’ দেখিয়ে নুরুল হকের নামে ১০৪৮ নং খতিয়ান পুনরায় সৃজন ও সেখান থেকে খন্ড খতিয়ান খোলা হয়;এমন অভিযোগ তাদের। বিষয়টি জানাজানি হলে জমির মালিকরা আবেদন করে ১০৪৮ নং খতিয়ান বাতিল ও এসএ ১২৮ ও ১৮১ নং খতিয়ান পুনর্বহালের দাবী জানান।
অভিযোগকারীরা আরও দাবি করেন, এসব লেনদেন ও জালিয়াতির টাকায় ওমর ফারুক পঞ্চগড় শহরে প্রায় ৪ শতক জমি ২০ লাখ টাকায় কিনে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। এ অপকর্মে জড়িতদের দ্রত আইনের আওতায় এনে ওই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে তেঁতুলিয়া থেকে বদলীর দাবি জানান তারা।ভুক্তভোগী আতিকুজ্জামান শাকিল বলেন, ‘ভুয়া খতিয়ান দেখিয়ে ভূমিদস্যু নুরু ৪০ জনের বেশি লোক নিয়ে আমার বাড়ীর বাউন্ডারীর বেড়া ভেঙে দখল নেয়। জমিটি ১ নং খতিয়ানভুক্ত এবং আমাদের দখলে ৬০ বছরেরও বেশি সময়। আমরা আদালত থেকে রায় পেয়েছি।’নুরুল হক নুরু অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘সব কাগজপত্র আমার কাছে বৈধভাবে রয়েছে।’ তহসিলদার ওমর ফারুক বলেন, ‘আমার বক্তব্য দেয়ার অনুমতি নেই, তাই কিছু বলতে পারছি না; অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। যার জমি তারাই পাবেন।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আফরোজ শাহিন খসরু বলেন, অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকতা বিরুদ্ধে একটি গণঅভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত অব্যাহত আছে।অভিযোগ প্রমানিত হলে পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত