ইউএনও–এসি ল্যান্ডদের নিরাপত্তায় আনসারদের পর্যাপ্ত অস্ত্র–গুলি রাখার পরামর্শ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৮ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪৩ |  আপডেট  : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:২৪

দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি দপ্তর ও স্থাপনায় একাধিক হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে মাঠ প্রশাসনে উদ্বেগ বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যেও আলোচনা চলছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংসতার সময় বিভিন্ন জায়গায় ফাঁড়ি ও থানা আক্রমণের ঘটনায় পুলিশ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি সতর্ক থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনারদের (এসি ল্যান্ড, ভূমি) নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

 জনপ্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে থানা আক্রমণ প্রতিরোধ করাই পুলিশের মূল লক্ষ্য থাকে। যে কারণে মাঠ পর্যায়ে ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, পুলিশ সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারছে না।

নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক গ্রুপে গত মঙ্গলবার একটি পোস্ট দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এই পোস্টে তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি দপ্তরে হামলার ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডদের সতর্ক হতে বলেন। তিনি ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডদের অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সার্বক্ষণিক অস্ত্র ও গুলি সঙ্গে রাখার নির্দেশনা দেন।

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমদ। ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, উপজেলাগুলোতে ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন। ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। থানা আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রায় সময়ই পুলিশ ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডের নিরাপত্তা দিতে অসমর্থ হয়। ফলে যথাসময়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে না।

 স্থানীয় সরকারসচিব এসব সহিংসতার জন্য ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে দায়ী করেন। তিনি পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে দেশে এক নৈরাজ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, যার দরুন শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। তাদের এ উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে, দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে আবার জাগিয়ে তোলা।’
 
ওই পোস্টের বিষয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হেলালুদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব গ্রুপে পোস্টটি দিয়েছি। আমরা ইউএনও বা এসি ল্যান্ডদের নিরাপত্তায় ১৫ লাখ টাকার একটা প্রকল্প নিয়েছি। সেটাও পোস্টে জানিয়েছি।’
 
সূত্র জানায়, হেলালুদ্দীনের পোস্টের নিচে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬৫টির মতো মন্তব্য পড়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা হেলালুদ্দীদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, সরকারি দপ্তরে সাম্প্রতিক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নিজেদের বিষয়গুলো নিয়ে কর্মকর্তারা তাঁদের নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপে বেশি আলোচনা করেন। সেখানে অনেকেই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ইউএনও-এসি ল্যান্ড বা মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। সরকার যত আইন-বিধিনিষেধ আরোপ করে, তা তাঁদের মাধ্যমেই প্রয়োগ হয়। সামান্য লকডাউন করতে গেলেই দেখা যায় ইউএনওর গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় বা যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়। এই কর্মকর্তারা কিন্তু সরকারের নির্দেশেই এসব করেন। ইউএনও-এসি ল্যান্ডদের নিরাপত্তার দরকার রয়েছে।  

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে গত ২৬-২৮ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এই তিন দিনে সরকারি হিসাবেই অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, থানা, ফাঁড়ি, ভূমি কার্যালয়সহ ৩১টি সরকারি ও আধা সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। চট্টগ্রামেও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয়, ডাকবাংলো ও থানায় হামলা হয়। এ ছাড়া গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ও থানায়। গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডের।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ৪ এপ্রিল সংসদে বলেছেন, হঠাৎ এ ধরনের তাণ্ডবের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। সংসদে দেওয়া বক্তব্যের পরদিন তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, হেফাজতের বিক্ষোভকে ঘিরে তিন দিনের সহিংসতায় ঘটনায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ এর আগে গত ২৯ মার্চ প্রত্যেক ইউএনওর বাসভবনে আনসার বাহিনীর সদস্যদের জন্য ব্যারাক ও সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের অনুমোদন দেয়। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা হয়। এরপর সরকার ইউএনওদের নিরাপত্তার জন্য ১০ জন করে আনসার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন বেশির ভাগ উপজেলায় ৪ থেকে ৬ জন করে আনসার দায়িত্ব পালন করছেন। অবশ্য সবার হাতে অস্ত্র নেই। বর্তমানে দেশে ৪৯২টি উপজেলা রয়েছে।

 বর্তমান পরিস্থিতিতে মাঠ প্রশাসনে উদ্বেগ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শেখ ইউসুফ হারুন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওর ওপর বা তাঁদের কার্যালয়ে হামলা করার অর্থ সব জায়গাতেই হামলা হলো। আর এসি ল্যান্ডদের অফিস জনগণের ভূমিসংক্রান্ত কাগজ সংরক্ষণ করে। এগুলো পুড়ে গেলে বা নষ্ট করা হলে জনগণের ক্ষতি হয়। এসব হামলা প্রতিহত করতে এবং নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত