আসুন, দানব সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি: ফখরুল
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২১, ১৩:২৬ | আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে আমাদের এই সরকার ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করেছে, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ভালো কথা। আমরাও চাই প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুন্দর হোক, সুষ্ঠু হোক। কিন্তু এই সরকার খুব পরিকল্পিতভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের মানুষের যে আশা-ভরসা, তা শেষ করে দিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। স্পষ্ট ভাষায় আওয়ামী লীগকে বলতে চাই, আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। অন্যথায় প্রতিটি বিকৃত সরকারকে যেভাবে পদত্যাগ করতে হয়েছে, আপনাদেরও একইভাবে বিদায় নিতে হবে।’
আজ (সোমবার) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাধীনতা দিবসে মানুষ হত্যা ও পুলিশী হামলার অভিযোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। সমাবেশে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন।
ফখরুল বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা গত কয়েকদিন ধরে লক্ষ করেছি, এই সরকার তার পেটুয়াবাহিনীসহ নিরীহ মানুষদের ওপর অত্যাচার করেছে, হত্যা করেছে, গ্রেফতার করেছে। আমাদের দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায়সহ ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এভাবে কখনো একটি দেশ চলতে পারে না।’
বর্তমান সরকারকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে মন্তব্য করে বিএনপি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রক্ত ঝরানোর দায় সরকারকে নিতে হবে। গত কয়েকদিনে সরকারের পেটুয়া বাহিনী দিয়ে জনগণের ওপরে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। এভাবে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। তখন জনগণ তা রায় দেবেন। জনগণ তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন। তখন স্বৈরাচারের পতন ঘটবে।’
সমাবেশে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারের পুলিশ বাহিনী এ পর্যন্ত ১৭ জনকে হত্যা করেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা দিবসে মানুষ হত্যা ও পুলিশী হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর মাধ্যমে স্বাধীনতাকে কলুষিত করেছে। মসজিদে হামলা করা হচ্ছে। দেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপি চায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক, না হলে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এই অন্যায় কঠোরভাবে প্রতিহত করবে।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম,ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ, ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী আরিফা সুলতানা রুমা, স্বেচ্ছাসেবকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজী ইফতেখায়রুজ্জামান শিমুল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।
এদিকে স্বাধীনতা দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ সমাবেশে কড়া পুলিশি ব্যারিকেডের মধ্যেই নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে যোগ দিচ্ছেন।
সোমবার (২৯ মার্চ)সকাল ১০টায় প্রতিবাদ সমাবেশটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৮ থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে সমাবেশে আসতে দলটির প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপির ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রবেশ মুখে অনুমতি ছাড়া কেউ আসতে চাইলে তাকে বাঁধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাব এবং এর আশ পাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়ন করা হয়েছে। যেকোন ধরনের অপ্রতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এর আগে গত শনিবার বিকেলে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার দিবসে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে মানুষ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ আগামী ২৯ মার্চ ঢাকাসহ সকল মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং ৩০ মার্চ জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল অথবা সমাবেশের কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করছি।”
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত