আজ আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পরীক্ষা বিরোধী দিবস

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৭ |  আপডেট  : ১৩ মে ২০২৪, ১৬:০৬

২৯ আগস্ট, আজ আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পরীক্ষা বিরোধী দিবস। ইউনাইটেড নেশন্স জেনারেল অ্যাসেম্বলি ২০০৯ সালের ২ ডিসেম্বর, আগস্টের ২৯ তারিখকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পরীক্ষা বিরোধী দিবস বলে ঘোষণা করে। বিশ্বের সব দেশের মানুষের মধ্যে অস্ত্রবিরোধী সচেতনা তৈরির উদ্দেশ্যেই দিবসটি পালন করা হয়।

বিশ্বব্যাপী পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কাছে হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। এসব অস্ত্র তৈরিতে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কোটি কোটি ডলার অর্থ ব্যয় করছে। সেইসঙ্গে এসব অস্ত্র আরো গতিশীল ও অত্যাধুনিকভাবে তৈরি করতেও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করছে। 

বিশ্বে বর্তমানে ঘোষিতভাবে পারমানবিক অস্ত্রধারী মোট ৯টি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চায়না, ভারত, পাকিস্তান, ও উত্তর করিয়া। এর মধ্যে শুধু ইসরাইল তাদের দেশে পারমানবিক অস্ত্রের উপস্থিতি স্বীকার করেনি। পরমাণু অস্ত্র গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রকৃত আকার-আয়তন  সম্বন্ধে অবগত ও নিশ্চিত হতে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো। 

এসব পরীক্ষণের ফলে পরমাণু অস্ত্র বিস্ফোরণের অনেক প্রতিক্রিয়ার প্রায় সঠিক ফলাফল সম্পর্কে অবগত হন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। তবে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের ফলে বায়ুবাহিত তেজস্ক্রিয় কণাসমূহের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা অত্যন্ত বিপজ্জনক। ১০০ মাইলেরও অধিক এলাকায়ও এর প্রভাব পড়ে। তেজস্ক্রিয়তাজনিত কারণে ক্যান্সার আক্রান্তের হার এবং জন্ম বিকলাঙ্গতা বৃদ্ধি পায়।

যুদ্ধের ইতিহাসে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাত্র দুটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত করা হয়েছিল। লিটল বয় নামের প্রথম বোমাটি ৬ আগস্ট ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমাতে এবং ফ্যাট ম্যান নামক দ্বিতীয় বোমাটি তিনদিন পর জাপানের নাগাসাকিতে নিক্ষেপ করা হয়। তবে এর ফলাফল ছিল ভয়াবহ। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও ক্ষতিকর আলোক-কণা বিকিরণের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মারা গিয়েছিল প্রায় ১২০,০০০ লোক এবং আয়নাইজিংয়ের ফলে ধীরে ধীরে আরো অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল। 

হিরোশিমা ও নাগাসাকির সেই বিস্ফোরণের পরেও এখন পর্যন্ত আরো পাঁচ শতাধিকবারের বেশি পরীক্ষামূলকভাবে এবং প্রদর্শনের জন্য এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ২৯ আগস্ট, ১৯৪৯ সালে প্রথমবারের মতো সোভিয়েত আণবিক অস্ত্র পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৯৫০ সালে সারোভে তিনি প্রথমবারের মতো মেগাটন-দূরত্বের সোভিয়েত হাইড্রোজেন বোমা নক্সার মান উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা নেন। এ নক্সাই পরবর্তীকালে শাখারভের তৃতীয় চিন্তা নামে রাশিয়া এবং টেলার-উলাম নক্সা নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিতি লাভ করে। 

১৯৫৫ সালে আরডিএস-৩৭ নামে প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়। এরচেয়েও ব্যাপক মাত্রায় ও একই নক্সায় শাখারভ কাজ করেছিলেন। ৫০ মেগাটন ওজনের জার বোম্বা নামে অক্টোবর, ১৯৬১ সালে পরীক্ষা চালানো হয়। স্মরণাতীতকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা হিসেবে এর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণ পরবর্তী সময়ে মাশরুম আকৃতির বিরাট কৃত্রিম মেঘমালা ১৬০ কিলোমিটার দূর থেকেও দৃশ্যমান হয়েছিল। এছাড়াও, ৫৬ কিলোমিটার উঁচু স্থান থেকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল এ মেঘমালা।

এর পূর্বেই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমা আবিস্কার ও উন্নয়নের জন্য উদ্যোগী হয় এবং ছয়টি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ফেলে। ১৯৪৬ সালে অপারেশন ক্রসরোড নামে দুইটি পরমাণু বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় যা ছিল তাদের ওই সময়কার তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি। ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু পরীক্ষার জন্য তাদের নিজস্ব এলাকা হিসেবে নেভাদা টেস্ট সাইট এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্যাসিফিক প্রোভিং গ্রাউন্ড গড়ে তোলে। 

যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে তারাই একমাত্র দেশ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি নগরীতে পৃথক দু’টি আণবিক বোমা পতনপূর্বক বিস্ফোরণ ঘটায়। সরকারী হিসেব মোতাবেক স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ের পূর্বে ও পরবর্তী সময়ে ১০৫৪টিরও অধিক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা কার্য পরিচালনা করে।

১৯৪০-এর দশকে নতুন ধরণের পরমাণু বোমা হিসেবে হাইড্রোজেন বোমা আবিস্কারের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমগ্র বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষণের স্থল হিসেবে তারা প্রশান্ত মহাসাগরকে বেছে নেয়। এছাড়াও তারা পরমাণু বিভাজন বা ফিসন করে একের পর এক নিত্য নতুন ও উন্নততর পারমাণবিক বোমা আবিস্কার করতে থাকে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন সীমিত মাত্রায় বিশেষ করে কাজাখিস্তানে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে শৈথিল্যের সূত্রপাত হয়, যা ইতিহাসে স্নায়ুযুদ্ধ বা ঠাণ্ডা যুদ্ধ বা শীতল যুদ্ধ নামে পরিচিত। তবে উভয় দেশই পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা কার্য অব্যাহত গতিতে চালাতে থাকে। তারা বিংশ শতকের অর্ধেকেরও বেশি সময়কাল শত শত পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তা ও সক্ষমতা যাচাই করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব এলাকা হিসেবে নেভাদা টেস্ট সাইটে শত শত পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালায়। নভেম্বর, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ব্যাপক, বিস্তৃত ও বৃহৎ মার্কিন পারমাণবিক পরীক্ষাগুলো স্থলভাগে সম্পন্ন হতো। পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তা বন্ধের লক্ষ্যে পরবর্তীতে আংশিক পরীক্ষা বন্ধ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে তারা আত্মরক্ষার্থে ভূ-গর্ভে পরীক্ষা কার্যসম্পন্ন করে।

নতুন ধরনের হাইড্রোজেন বোমা আবিস্কার ও পরীক্ষার ফলে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ভয়াবহতা বিজ্ঞানীমহল কল্পনাও করতে পারেননি। বিপুল পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়া মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আবহাওয়া স্তরের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে যে কোন পারমাণবিক পরীক্ষা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত