ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণে ৪ দিন ধরে আতঙ্ক

২৮ নভেম্বর মোল্লাকান্দি ইউপি নির্বাচন, সংঘর্ষের শঙ্কা

  কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, মোল্লাকান্দি থেকে ফিরে

প্রকাশ: ৮ নভেম্বর ২০২১, ১৮:৪০ |  আপডেট  : ১৩ মে ২০২৪, ০০:৪৮

আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও  বিদ্রোহী (¯^তন্ত্র) প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব বিরোধ থাকলেও ২৮ নভেম্বরের অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে মোল্লাকান্দির আওয়ামী লীগের বিবদমান দু’পক্ষ আবারও মুখোমুখি অবস্থানে। এরই জের ধরে গত শুক্রবার দুপুরে মোল্লাকান্দির পূর্ব মাকহাটী গ্রামে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও  বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষই অসংখ্য ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পুলিশের তালিকাভূক্ত বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসী মিল্টন মল্লিক ও তার বাহিনী বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে অপতৎপরতায় মোল্লাকান্দির নির্বাচনি আবহ ঘোলাটে করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নিরীহ গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আ’লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মল্লিক গোষ্ঠীর আধিপত্য বজায় রাখতে এক সময়ের সক্রিয় বিএনপি কর্মী ও পুলিশের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী মিল্টন মল্লিক গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনার শেল্টারে অবস্থান নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। গত ৫ বছর ধরে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে, যা এখনও অব্যাহত। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলাটে করতে বিএনপি কর্মী  মিল্টন মল্লিক ও তার বাহিনী শুক্রবার দুপুরে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালালে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এদিকে শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছে এবং পুলিশ আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতি অবনতি করার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই পুলিশের একাধিক টিম মোল্লাকান্দির কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে টহল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে জানান সদর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক। ওসি জানান, শুক্রবারের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশে সদর থানা ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দু’পক্ষের কর্মী সমর্থকরা আত্নগোপনে চলে যাওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দে জানিয়েছেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হলে দ্রুত সময়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে টহল পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে  মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের পূর্ব মাকহাটী গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করার আগাম প্রস্তুুতির অংশ হিসেবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিপন পাটোয়ারীর কর্মী সমর্থক জমু মোল্লা-খায়রুদ্দিন মোল্লা গংদের সঙ্গে একই গ্রামের বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসী মিল্টন মল্লিক গং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনার পক্ষ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এরই জের ধরে গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে দু’পক্ষ মজুদ রাখা অসংখ্য ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসায় গ্রেফতার এড়াতে দু’পক্ষই আত্মগোপনে চলে যায়।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে গত ৫ বছরে অসংখ্যবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সেই পুরনো বিরোধের জের ধরেই আসছে ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া উভয়পক্ষই একে অপরকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালায় বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

অভিযুক্ত কে এই মিল্টন মল্লিক

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের পূর্ব মাকহাটী গ্রামের বারেক মল্লিকের ছেলে মিল্টন মল্লিক। এই গ্রামে মল্লিক গোষ্ঠী প্রভাবশালী হওয়ায় সক্রিয় বিএনপি কর্মী মিল্টন মল্লিক গত ইউপি নির্বাচনে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনার শেল্টার নিয়ে নব্য আ’লীগ কর্মী বনে যায়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১১ মে দিনগত গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী থানার সীমান্তবর্তী যশলং ইউনিয়নের দরজারপাড় গ্রামের জামালউদ্দিন সর্দারের সৌদি প্রবাসী ছেলে শিপন সর্দারের বসতঘরে মিল্টন মল্লিকের নেতৃত্বে ককটেল তৈরীর সময় বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মুসা মিজি নিহত হলে পুলিশের ঝামেলা এড়াতে তার লাশ গুম করে ফেলে মিল্টন মল্লিকসহ সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরপরই মুন্সীগঞ্জ সদর থানা ও টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশ দরজারপাড় গ্রামের ঘটনাস্থলে গেলে ককটেল তৈরীর বিপুল পরিমানের আলামত ও রক্তের দাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার আলামত সংগ্রহ করলেও মূল হোতা মিল্টন মল্লিক রয়ে যায় ধরাছোয়াঁর বাইরে। এ ঘটনায় টঙ্গিবাড়ী থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা রুজু করা হয়।

মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিপন হোসেন পাটোয়ারী বলেন, পূর্ব মাকহাটী গ্রামের মিল্টন মল্লিক বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসী। গত ৫ বছর ধরে আ’লীগের একটি পক্ষের শেল্টার নিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরী করেছে। মিল্টন মল্লিক বাহিনীর নানা অপকর্ম চালালেও একটি স্বার্থনেশী মহলের শেল্টার থাকায় হামলা-নির্যাতনের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরও বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে মিল্টন মল্লিক ও তার  বাহিনীর সন্ত্রাসীরা মোল্লাকান্দির শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে নান অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

জানতে চাইলে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনা জানান,

তার কর্মী সমর্থকদের গ্রাম থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে পূর্ব মাকহাটী গ্রামের আ’লীগ কর্মী জমু মোল্লা ও তার ভাই খায়রুদ্দিন মোল্লা গং বহিরাগতদের নিয়ে হামলা চালায়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নৌকা মার্কার কর্মী সমর্থকদের নানা কর্মকান্ডে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারবো কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।

এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, শুক্রবারের বিচ্ছিন্ন ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় কোনো অভিযোগ দাখিল করেনি। তবে পুনরায় যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য পুলিশ কঠোর ভুমিকায় নেমেছে। আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করা হলে নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে। পুলিশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত