২৪ ঘণ্টায় সড়কে প্রাণ গেল ২২ জনের
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২২, ১৪:৫৩ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০১
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২২ জন। এরমধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পৃথক দুর্ঘটনায় মা ও দুই সন্তানসহ ৭ জন, বগুড়ার কাহালু ও শেরপুরে ৮ জন, পাবনায় পিকআপ চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক পরিবারের ৩ জন, গাজীপুরে ২ জন, ফটিকছড়িতে একজন ও কাওরানবাজারে একজন মারা যান। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে বাসের ধাক্কায় ৪ জন নিহতের পর ফের মির্জাপুরে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বাসচাপায় মা ও দুই শিশু সন্তানসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার জামুর্কী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মির্জাপুর উপজেলার বাশতৈল এলাকার মাসুদের স্ত্রী পারভিন আক্তার (২৮) ও তার ছেলে সুমন (৮) ও মেয়ে সাদিয়া (৬)।
এর আগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে থেমে থাকা বালুবোঝাই একটি ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কায় ৪ বাসযাত্রী নিহত ও আরও অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। তবে সকালে রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শনিবার (১৬ই জুলাই) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর অংশের দুল্যা মুনসুর নামকস্থানে এই দুর্ঘটনার ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও গোড়াই হাইওয়ে থাকা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকাগামী বালুভর্তি ট্রাক মহাসড়কে থেমে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে বিনিময় পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দেয়। এসময় বাসের পেছনে থাকা অপর একটি মাইক্রোবাসও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসের পেছনে আছড়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের তিনযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ও হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। মাইক্রোবাসের যাত্রী মো. ইউসুফ আলী জানান, পাবনা থেকে ঢাকা যাচ্ছিলাম।
এসময় মহাসড়কের ওইস্থানে পৌঁছালে সামনে থাকা বাসের সাথে ট্রাকের সংঘর্ষ হয়, আমাদের মাইক্রোবাসটিও বাসের পেছনে ছিলো তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি।
কাশেম নামের এক ব্যক্তি জানান, আমার দুলাভাই সেনাবাহিনীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। চাকরিতে যোগ দিতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বিনিময় বাসযোগে ঢাকা যাচ্ছিল। সে বাসের ডানপাশে থাকায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঘাটাইল সেনানিবাসে নেয়া করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ার কাহালু ও শেরপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৬ জুলাই) সকাল ও শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকেলে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
বগুড়ার কাহালুতে প্রাইভে টকার ও মিনিট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৬ জুলাই) সাড়ে ৮টার দিকে কাহালুর দরগাহহাট এলাকার সজল ফ্যাক্টরির সামনে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নওগাঁর ধামইরহাটের তানছের আলী (৬০), তার ছেলে টগর আলী (৩৫), মফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান (৩৫) এবং প্রাইভেটকারের চালক পত্নীতলা এলাকার মান্নুর ছেলে সুমন(৩০)। এতে শাকিল (২০) নামে আরও এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বগুড়ার শেরপুরে যাত্রীবাহী দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বাসের চালকসহ অন্তত ৮ যাত্রী। গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তাদেরকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকেল সাড়ে তিনটায় শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ঘোগা ব্রিজ এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা মশিউর রহমান (৩৫), তার স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩০), নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফেন্সি বেগম (৪০) ও বাসচালক গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার কোব্বাত আলীর ছেলে সুজন মিয়া (৩০)। এদের মধ্যে তিনজনই পোশাক শ্রমিক। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল ঢাকায় ফিরছিলেন তারা।
এদিকে পাবনার সাঁথিয়ায় পিকআপের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী একই পরিবারের ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতক ট্রাকটি আটক করেছে। তবে চালক পলাতক রয়েছে। নিহতরা হলেন- পাবনা সদর উপজেলার জালাপুর গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে জুয়েল ( ৩০), রবি চানের ছেলে সুরুজ্জামান (৩৯) অপরজন উভয়ের চাচা জুরান মোল্লার ছেলে মতিন (৬০)। নিহতরা একই পরিবারের আপন চাচা ভাতিজা।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় দিকে একই পরিবারের ৩ জন শাহজাদপুরের যাচ্ছিল। পাবনার সাঁথিয়ার ছোট পাথাইল হাট নামক স্থানে একটি অটোভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় সিটকে পড়লে বিপরীত দিক থেকে একটি পিকআপ ভ্যান এসে তাদের চাপা দেয়। এ সময় মতিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে স্থানীয়রা জুয়েল ও সুরুজ্জামানকে উদ্ধার করে এনায়েতপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তারা মারা যান।
সাঁথিয়ার ওসি তদন্ত কমল কুমার দেবনাথ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে গাজীপুরের পূবাইলে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে আরো তিন জন। নিহতদের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায় সকালে, শনিবার সকালে নগরের পূবাইল কলেজগেট এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় একজন লেগুনাযাত্রী নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, একই থানার হায়দরাবাদ সুকুন্দিরবাগ এলাকায় দুটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। দুটি ঘটনায় অন্তত ৩ জন আহত হয়েছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পূবাইল থানার ওসি মোঃ মহিদুল ইসলাম জানান, নিহত দুজনই পুরুষ, তাদের বিস্তারিত পরিচয় এখনো জানা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করাতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।
এদিকে ফটিকছড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় এক গৃহবধূ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছে দুইজন। আজ সকাল সাড়ে ৭টার সময় গহিরা-হেঁয়াকো সড়কের মির্জারহাটের কোর্টবাড়িয়া এলাকায় পিকআপ-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় শারমিন আকতার (২৬) নামে এক গৃহবধূ নিহত হন।
এ ঘটনায় মোবারক হোসেন (৯) ও চম্পাকলি (১১) নামে আরো ২ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আহতদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।পরে পিকআপ চালককে পুলিশ আটক করে। ভূজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হেলাল ফারুকী জানান, ঘাতক চালক মো. হাশেম (৪৫), পিতা- মৃত মো. হারেছ, সাং পানুয়া, ইউনিয়ন বাগানবাজারকে মুল আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পাশে পান্থকুঞ্জ পার্কের কোনায় দ্রুতগামী অজ্ঞাত গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ইব্রাহিম বিশ্বাস (২৪) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে।
শনিবার (১৬ জুলাই) ভোরের দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভোর পাঁচটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাহবাগ থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শাহাবুদ্দিন জানান, আমরা খবর পেয়ে সোনারগাঁও হোটেলের পাশে পান্থকুঞ্জ পার্কের কোণায় রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পাই। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, আশেপাশের লোকজনের মুখে জানতে পারি নিহত যুবক ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ওই গাড়িতেই পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, নিহতের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার উত্তর সাললায়। তার পিতার নাম মো. সান্টু বিশ্বাস।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত