হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৩:৩২ | আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:০৯
এক সময় ছিল যখন গ্রামে সারি সারি তাল গাছে নান্দনিক বাবুই পাখির বাসা ঝুলত। এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্ট বাসা এবং বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বয়নশিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে বিলুপ্ত প্রায় তাল গাছের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির কারিগর বাবুই পাখি ও তার তৈরী দৃষ্টি নন্দন বাসা। এক সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কবি রজনীকান্ত সেনের বিখ্যাত কবিতা, বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে। অমর কবিতাটি এখন অনেকেই ভুলে গেছে। দেখা মিলছে না বাবুই বাখির বাসা। শুধুমাত্র পাঠ্য পুস্তকের কবিতা পড়েই শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির শিল্প নিপুণতার কথা জানতে পারে।
গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছ হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পীমনা বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এখন এসব দৃশ্য শুধুই কল্পনার ছবি। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষনীয়, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা পড়ে যেত না। বাবুই পাখির শক্ত বুননের বাসা শিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি যা টেনেও ছেঁড়া সম্ভব নয। কালের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে দৃষ্টি ভোলানো পাখিটিকেও তার তৈরি বাসা যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলতো তা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য নানা ভাবে ভাব-ভালবাসা নিবেদন করে এরা। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পর্ক গড়ে উঠে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুই পাখির সময় লাগে ৪দিন। পুরুষ বাবুই মনের আনন্দে শিল্পসম্মত ও নিপুণভাবে বিরামহীন ভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। ক্ষেতে ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। বর্তমানে
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির এব অপরুপ সৃষ্টি বাবুই পাখি। প্রকৃতি প্রেমী নুরুল আমিন বলেন, অতিমাত্রায় গাছ ও ফসলের মাঠ উজাড় করে শিল্প-কারখানা ও ইটের ভাটা নির্মাণে জীববৈচিত্র বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। যে কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার শিল্পকর্ম। কাউনিয়ায় গত ৫ বছর আগে দৃর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় থেকে তাল গাছ রোপন কর্মসূচি পালন করা হলেও তাল গাছের দেখা মিলছে না। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিঞ্চিতা রহমান জানান, বাবুই পাখি প্রকৃতির নিপুন কারিগর। এ পাখি অত্যন্ত সৌন্দর্য সচেতন। বাবুই পাখি সংরক্ষনের জন্য সরকারী ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত