স্মরণ- প্রফেসর আবদুল মোমিন চৌধুরী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৫১ |  আপডেট  : ৩ মে ২০২৪, ১৯:১৭

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রফেসর আবদুল মোমিন চৌধুরীর মৃত্যুতে বিক্রমপুরের জীবিত কৃতি সন্তানদের মধ্যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস প্রফেসর ও প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী লেখক-সম্পাদক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ছাড়া আর কেউ রইল না। তাঁরা দু'জনও বয়সের ভারে এখন সীমিতভাবে চলাফেরা করেন। প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এখনও সভা সেমিনারে যান, লেখালেখি করেন। কিন্তু ড. বি. চৌধুরী সাহেব ঘর থেকে বাহিরে আর যাননা। তাঁর বয়স এখন ৯৪ বৎসর চলছে। তাঁর চেয়ে ১০ বছরের ছোট একই গ্রামের সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মোমিন চৌধুরী গত ৯ ফেব্রুয়ারী ৮৪ বৎসর বয়সে ঢাকার লালমাটিয়ার বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুকে 'হঠাৎ মৃত্যু' বলা যায়।

বিক্রমপুরের শ্রীনগর-মজিদপুর দয়হাটা গ্রামের ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান আবদুল মোমিন চৌধুরী ১৯৪০ সালে জনগ্রহণ করেন। ঢাকার আরমানি টোলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে সাধারণ ইতিহাসে বি. এ (অনার্স) ও ১৯৬০ সালে এম. এ ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিস থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৫-৭৬ সালে তিনি কমনওয়েলথ ফেলোশিপের অধীনে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ সম্পন্ন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বিভাগীয় প্রধান, কলা অনুষদের ডীন থাকাকালে তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা অনার্সের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য না হয়ে কলেজে ভর্তি হয়। কন্যার ভর্তির ব্যাপারে তিনি কোন চেষ্টা করেননি। এমন ছিল তার নীতিবোধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত খেলাধুলায় অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন, ১৯৭৬-৭৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট টিমের সভাপতি ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সদস্য ছিলেন (১৯৮৫-১৯৮৯)। ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ম্যানেজার হিসেবে পাকিস্তান সফর করেন।

এছাড়াও আবদুল মমিন চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারভিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের জ্যেষ্ঠ ফুল ব্রাইট ফেলো ও ভিজিটিং স্কলার ছিলেন। রাজনৈতিক ইতিহাস ও প্রাচীন আমলে বঙ্গ মুসলিম অবদানের উপর তার একাধিক গবেষণাধর্মী বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লিখিত বইয়ের মধ্যে " ডাইনাষ্টিক হিসট্রি অব বেঙ্গল ( ৭৫০-১২০০ এডি) ” অন্যতম।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য ছাড়াও এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। 

দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক আবদুল মোমিন চৌধুরীর ২০২১ সালে স্ত্রী বিয়োগ হয়। তার শ্বশুর ছিলেন ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিএ সিদ্দিকি, যিনি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর টিক্কা খানকে শপথ পাঠ করাতে সম্মত হননি।

বিক্রমপুরের অন্যতম কৃতি সন্তান প্রফেসর আবদুল মমিন চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরা আন্তরিকভাবে শোকাভূত। তার রূহের মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন,
লেখক ও গবেষক

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত