স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তি পায়নি ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে কোনও চলচ্চিত্র

  বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৭ মার্চ ২০২২, ১১:৫৩ |  আপডেট  : ১৪ মে ২০২৪, ০৯:৫২

বাঙালি জাতির স্বাধিকার গৌরবময় সূচনা মূলত হয় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, রেসকোর্স ময়দানে। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেন ঐতিহাসিক এক ভাষণ।  

যেখানে বাঙালি জাতি পায় যুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রাথমিক দিক নির্দেশনা। ২০১৭ সালে গুরুত্ববহ এ ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য (ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) হিসেবে ঘোষণা করে।

অনেকেই মনে করেন, এমন একটি পটপরিবর্তনের ঘটনা উঠে আসতে পারতো সেলুলয়েড পর্দায়। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তি পায়নি ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে কোনও চলচ্চিত্র।

সম্প্রতি তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেগুলোর মূল উপজীব্য বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এগুলো হলো ‘তর্জনী’, ‘মাইক’ ও ‘রেডিও’। ‘রেডিও’ ছাড়া বাকিগুলো এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। 

২০১৯ সালে নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি প্রথম নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ছবির নাম রাখেন ‘তর্জনী’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে কেমন প্রভাব ফেলছে, তা এই সিনেমায় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন নির্মাতা। যেখানে ১৯৭১, ১৯৭৫ এবং ২০১৭—এই তিনটা সময়কে দেখানো হবে। 

২০১৯ সালের মার্চে এটি নিয়ে পোস্টার প্রকাশ করেন সোহেল রানা বয়াতি। তবে নানা জটিলতায় কাজটি তিনি আর এগিয়ে নিতে পারেননি।

বিষয়টি নিয়ে এই নির্মাতা বলেন, ‘মূলত আমরা প্রডিউসার পাইনি। একজনের সঙ্গে আমাদের কথা হলেও শেষপর্যন্ত তা আর নির্মাণ হয়নি। ছবিতে আমি বলতে চেয়েছি বঙ্গবন্ধুর যে আইডোলজি সেখানে আমরা এখন আর নেই। এ কারণেই এত সমস্যা। এছাড়া ছবির অন্যতম অংশ ১৯৭১, ১৯৭৫ ও ২০১৭। এগুলোকে ক্যামেরায় তুলে ধরতে যাওয়াটাও অনেকটা চ্যালেঞ্জের। অনেক প্রডিউসার ঝুঁকি নিতে চান না।’

তিনি অভিযোগ করে জানান, বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মাণে অনেক বেশি বাধা ও ফিল্টার পেরিয়ে তৈরি করতে হয়। এটাও একটা চ্যালেঞ্জ।

এদিকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা আসে ‘মাইক’ নামের ছবি নির্মাণের। শিশুতোষ এ সিনেমার কাজ এখনও চলছে। এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল।

পাশাপাশি একই সময়ে ‘রেডিও’ নামের পূর্ণদৈর্ঘ্য বাণিজ্যিক ছবির ঘোষণা আসে। যা নির্মাণে আছেন অনন্য মামুন। এটিই একমাত্র চলচ্চিত্র যার শুটিং ভালোভাবে শেষ হয়েছে।

তবে নির্মাতা মনে করেন, প্রামাণ্যচিত্র বা তথ্যচিত্র হওয়ার যে বিপত্তি তা বাণিজ্যিক ছবিতে নেই। সে কারণে নির্মাণে কোনও বাধা পাননি তিনি।

অনন্য মামুনের ভাষ্য, ‘আমি প্রথম থেকেই একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণের চেষ্টা করেছি। যার কারণে এখানে বাজেট নিয়ে কোনও টানাপোড়েন তৈরি হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনও তথ্যচিত্র নির্মাণের মধ্যে যাইনি। আমার গল্পটি একটি পানিঘেরা বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের। যেখানে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় হলো রেডিও। গ্রামে দুজনের আছে রেডিও। যার একজন মুক্তিযুদ্ধপন্থী ও অপরজন পরিপন্থী। আমি চেষ্টা করেছি ফুল লেন্থ কমার্শিয়াল ছবি নির্মাণের। চলতি মাসেই এটি মুক্তি পাবে।’

অনন্য মামুন বাজেট নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি না হলেও এটাকে বড় কারণ হিসেবে দেখেন অনেক চলচ্চিত্র বিশ্লেষক। 

প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‌‘এ ধরনের চলচ্চিত্রে বাজেট উঠে আসার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই প্রযোজকরা আগ্রহী কম হয়। এক্ষেত্রে সরকারকে পাশে থাকতে হবে। যারা নির্মাণ করতে চায়, তাদেরকে সরকার সহায়তা করা উচিত। খরচ উঠে আসার কথা নয়, সেগুলোতে সরকার নির্মাতার পাশে দাঁড়াতে হবে। একটা সময় ভাষা বা মুক্তিযুদ্ধ যাই হোক- টাকা উঠে আসতো। এখন আসে না বলেই ছবি নির্মাণ নেই।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র শাখায় যোগাযোগ করা হলে কাউকে ফোন পাওয়া যায়নি।

তবে বিগত কয়েক বছরে সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘সরকার সবসময়ই মুক্তিযুদ্ধের ছবি পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি হলে বাড়তি ফিল্টারেশনের যে অভিযোগ, তা ঠিক নয়। বঙ্গবন্ধু বা সঠিক ইতিহাস ছড়িয়ে পড়ুক তা আমরা চাই। এ কারণে কোনও ছবি এলে তা, আমরা সংশোধনী দিই। চেষ্টা করি সঠিক ইতিহাসে এটি সামনে আসুক।’

এদিকে অনেকেই মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ ও চলচ্চিত্র ভাবনা আরও বেশি করে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। ৭ মার্চের ভাষণ, অস্থায়ী সরকার, ১৪ ডিসেম্বরের মতো বিশেষ বিষয়গুলো নিয়ে ছবি নির্মাণে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত