সু চি বিরুদ্ধে এবার গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৭ |  আপডেট  : ৯ মে ২০২৪, ১৪:০০

মিয়ানমারের সাবেক স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির বিরুদ্ধে এবার গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে জান্তা সরকার। বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সে আদালতে হাজিরা দেন সু চি। এর পরপরই তাঁর বিরুদ্ধে নতুন এই অভিযোগ সম্পর্কে জানান সু চির আইনজীবী। সেনা অভ্যুত্থানে আটক হওয়ার পর সু চির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মামলা হয়েছে, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে গুরুতর।

 গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। এর পরপরই আটক হন সু চি (৭৫) ও তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কয়েকজন শীর্ষ নেতা। আটক সু চিকে কোথায় রাখা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট নয়। তাঁর নামে জান্তা সরকার একাধিক মামলা করেছে। অভিযোগের তালিকায় অবৈধ উপায়ে ওয়াকিটকি আমদানি ও ব্যবহার, ঘুষ হিসেবে সোনা, অর্থ গ্রহণসহ আরও নানা বিষয় রয়েছে।

 জান্তা সরকার অজ্ঞাত স্থান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সু চিকে আদালতের কার্যক্রমে যুক্ত করে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সু চির হাজিরার দিন। এই সময় তাঁর নামে উপনিবেশ আমলে প্রণীত কর্মকর্তাদের গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছে জান্তা সরকার।

সু চির আইনজীবী দলের প্রধান খিন মং ঝাউয়ের বরাতে রয়টার্স বলছে, সু চি ছাড়াও অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত এনএলডি সরকারের তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ইয়াঙ্গুনের আদালতে এ অভিযোগ দায়ের হলেও তা দুই দিন আগে তিনি জেনেছেন বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সু চিসহ এই মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল হতে পারে।

সু চির বিরুদ্ধে নতুন এ অভিযোগের বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জান্তা সরকারের প্রতিনিধির কাছে জানতে চেয়ে টেলিফোন করা হলেও সাড়া মিলেনি।

এদিকে বুধবার আইনজীবীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে পরামর্শ করেছেন সু চি। এক বিবৃতিতে সু চির আইনজীবী মিন মিন সোয়ে জানান, তিনি (সু চি) সুস্থ আছেন। ভিডিও কলে তাঁকে সুস্থ মনে হয়েছে।

আজও রক্তাক্ত রাজপথ
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারের রাজপথ বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি সুস্পষ্ট—সেনাশাসন প্রত্যাহার ও সু চির মুক্তি। জান্তা সেনা–পুলিশের চরম দমন–পীড়নে দুই মাসের বিক্ষোভে দেশটিতে অন্তত ৫৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)। এর মধ্যে গত শনিবার এক দিনেই নিহত হয়েছেন ১৪১ জন। আটক হয়েছেন তিন সহস্রাধিক।

আজও মিয়ানমারের রাজপথে রক্ত ঝরেছে। এই সময় বিক্ষোভকারীরা রাজপথে সংবিধান পুড়িয়ে জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দেশটির গণমাধ্যমের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, সেনা–পুলিশের গুলিতে আজ অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মধ্যাঞ্চলীয় মনিওয়া শহরে মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। এতে একজন নিহত, পাঁচজন আহত হন। পুলিশের গুলিতে অপর একজন নিহত হয়েছেন মান্দালয়ে।

জান্তার ওপর হামলার খবর
রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) সংঘাতের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এতে অন্তত ২০ সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছে কেআইএ। ধ্বংস হয়েছে চারটি সেনা ট্রাক।

তবে রয়টার্সের পক্ষ থেকে এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলেও সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

এর আগে গত শনিবার কারেন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন থাইল্যান্ড সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমারের একটি সেনাচৌকিতে হামলা চালায়। এতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার এক সেনা কর্মকর্তাসহ ১০ জন নিহত হন। মারা যান সংগঠনটির একজন সদস্যও।

এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে শনিবার রাতেই মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মুতরা জেলায় কারেনদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্তত পাঁচটি এলাকায় বিমান হামলা চালায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনী। হামলার সময় গ্রামবাসী জঙ্গল ও পাহাড়ের ঢালে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচান। এরপর তিন হাজারের মতো গ্রামবাসী শরণার্থী হিসেবে সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ড চলে যান। যদিও তাঁদের বেশির ভাগকে জোরপূর্বক নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত