সিরাজদিখানে মেডিকেলে চান্স পেলো চা দোকানদারের ছেলে রিফাত

  লতা মন্ডল-সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩০ |  আপডেট  : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৪

মেডিকেলে ভর্তি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ার চান্স পেয়েছে মো. রিফাত বেপারী। সে মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের মজিদপুর এলাকার চা দোকানদার মো. ইউনোস বেপারীর ছেলে। মো. ইউনোস বেপারী কেয়াইন কাউয়ামারা বাজারের একজন চা বিক্রেতা ।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক অনন্ত চক্রবর্তী ও অধির রঞ্জন মন্ডল বলেন, রিফাত বেপারী খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। সে মেডিকেলে ভর্তির জন্য অনেক পরিশ্রম করেছে। সম্পূর্ণ নিজের মেধা ও প্রজ্ঞায় রিফাত মেডিকেলে পড়ার চান্স পেয়েছে। তার বাবা  একজন চা ও ভাজাপুড়ি দোকানদার । এলাকায় তারা খুবই সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। পরিবারে সে ছোট ছেলে। তার আরও এক ভাই রয়েছে। তাদের পরিবারে খুব অস্বচ্ছতা বিরাজ করছে।

শুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের  পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি নিখিল চক্রবর্তী বলেন, রিফাত উপজেলার শুলপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে থেকে জিপিএ ৫পেয়েছে। স্কুলে সে কখনো প্রাইভেট পরেনি । এই মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে মেধার অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সে মজিদপুরের তথা আমাদের গর্ব।  উপজেলায় সে অন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা তার ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করছি। রিফাত মেডিকেলে চান্স পাওয়ায়  এলাকায় আনন্দ বিরাজ করছে।  মোঃ রিফাত বলেন,ভবিষ্যতে রিফাত পড়তে চান কার্ডিওলজি নিয়ে। অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য কিছু করতে চান। তিনি বলেন, ছোট সময় থেকে পড়া অবস্থায় সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা কমকরে পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল আমার। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করতাম, দোকানে বাবার সঙ্গে কাজ করতাম। এতে তাঁর খারাপ লাগত না, ভালো লাগত। রিফাত আরোও জানান, শুলপুর সরকারি প্রাথমীক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণিতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। অভাবের কারণে নিজ গ্রামের শুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন রিফাত। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। এরপর সরকারি  বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হয়ে ২০২৪ সালে এ প্লাস পেয়ে পাস করেন। অর্থের অভাবে অন্য সহপাঠীদের মতো বেশী কুচিং করতে পারেননি।  কিন্তু পড়াশোনা থেকে সরে যাননি। সব সময় চিন্তা ছিল তাঁকে বড় হতে হবে। বাবা ও মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে। 

রিফাতের বাবা ইউনোস বেপারী বলেন, ছোট টিনের ঘর ও ভিটা ছাড়া কিছুই নেই তাঁর। অভাবের সংসার। জীবনে কোনো দিন কোনো কিছুর জন্য বায়না করেনি আমার রিফাত। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা খুবই ভালো, পড়তে বলা লাগেনি। চায়ের দোকানে এসে কাজ করেছে আবার পড়াশোনাও করেছে। দোকানে বসে পুরি ও সমুচা বানিয়েছে, বিক্রি করেছে। রিফাত ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ায় তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই গর্বিত। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। রিফাতের মা ঝর্না বেগম বলেন, আমার বড় ছেলেকে অভাবের কারনে পড়াতে পাড়ি নাই,ছোট ছেলে অভাবের মধ্যেই পড়ালেখা করেছে। ছেলে বড় ডাক্তার হউক। আমি খুবই আনন্দিত।

সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার বলেন, মোঃ রিফাত বেপারী হচ্ছে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মডেল, আইকন ও অনুপ্রেণা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় রিফাতকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এছাড়াও তার মেডিকেলে পড়তে সবসময় উপজেলা  প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে। তিনি মোঃ রিফাতের ভবিষ্যৎ জীবনের উজ্জ্বলতা কামনা করেন। রিফাত সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেডিকেলে ভর্তি পরিক্ষায় ৩২৩তম স্থান অর্জন করেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত