সম্পদ অর্জনে উপজেলা জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন এমপিদের: টিআইবি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৬ মে ২০২৪, ১৫:৩৩ |  আপডেট  : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০২

পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। সংসদ সদস্যদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ, যেখানে একজন চেয়ারম্যানের সম্পদ বৃদ্ধির হার ৪ হাজার ২০০ শতাংশের বেশি।

অন্যদিকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের প্রার্থীর মধ্যে ১১৭ জন কোটিপতি। যেখানে ৫৬০ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ৯৪ জন কোটিপতি। এছাড়া ৬১১ ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ১৭ জন ও ৪৩৫ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ৬ কোটিপতি প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পেশা হিসেবে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০ শতাংশই ব্যবসায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৭ শতাংশ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৪ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।

সোমবার (৬ মে) ধানমন্ডির টিআইবির কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. মো ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়টি নির্বাচন কমিশন, এনবিআর ও দুদকের খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বলে মনে করি।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি প্রথম ধাপে প্রথম পর্বে মন্ত্রী-এমপিদের ১৩ জন স্বজন নির্বাচন করছেন। প্রথম ধাপেই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা নির্বাচন দলীয় হলেও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলগতভাবে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের অধিকাংশই ‘আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী’ এবং দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থনপুষ্ট। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটি স্থানীয় প্রার্থীদের আটকাতে পারেনি। আগ্রহী প্রার্থীরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন।

টিআইবি বলছে, প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলার মধ্যে ১৪৪টির প্রার্থীদের হলফনামা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে, বাকি আটটি করেনি। ১৫২টি উপজেলার তিনটি নির্বাচনের প্রায় ৪ হাজার ৮০০টি হলফনামায় দেওয়া আট ধরনের তথ্যের বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের হস্তক্ষেপ বড় আলোচনার বিষয় হলেও এবার স্বজনদের মনোনয়ন নিয়ে চলছে বিতর্ক। প্রথম ধাপে প্রথম পর্বে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন- ১৩ জন। প্রার্থী হওয়ায় এগিয়ে ভাইয়েরা; চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই, জামাতা, ভাইয়ের ছেলে আছেন তালিকায়।

বিএনপি এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করা ২২ জামায়াত নেতা পরবর্তী সময়ে দলের সিদ্ধান্তে সরে দাঁড়ান।

টিআইবি জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশ। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৬৯.৮৬ শতাংশই ব্যবসায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৬.৫৯ শতাংশ, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৪.৩৭ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।

আর নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫২ শতাংশই নিজেকে গৃহিণী গৃহস্থালি কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। আয় নেই ১২ শতাংশের, ৩৯ শতাংশ নিজেদের আয়ের কোনো স্বীকৃত উৎস দেখাননি।

টিআইবির গবেষণা বলছে, সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪০ শতাংশই আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থী। প্রার্থীদের প্রায় ৯৩ শতাংশ প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকার নিচে, বাকি ৭ শতাংশ প্রার্থীর সম্পদ কোটি টাকার বেশি। দ্বিগুণ হয়েছে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা।

অন্যদিকে ১০০ বিঘা বা ৩৩ একর এর বেশি জমি আছে কমপক্ষে ১০ জনপ্রার্থীর। আর ২৩.৪১ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫২৮ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে সিলেটের বিশ্বনাথের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর। প্রার্থীদের ১৬.৬৪ শতাংশ বর্তমানে মামলায় অভিযুক্ত।

৫ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩৩১৯ শতাংশ, ১০ বছরে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১৮২৩ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪২৫১ শতাংশ।

স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১২৪০ শতাংশ। ৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে এ হার সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ, যেখানে একজন চেয়ারম্যানের সম্পদ বেড়েছে ৪২০০ শতাংশের বেশি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত