ঘুষ ছাড়া বরাদ্দের কাগজে সই করেনা

শ্রীপুরে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা দুই কর্মকর্তার হাতে জিম্মির অভিযোগ

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২২, ১৩:৪০ |  আপডেট  : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩২

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাগামহীন অভিযোগ উঠেছে। সব কাজেই ভাগ বসাতে চান ওই দুই কর্মকর্তা। একই উপজেলা টাঙ্গাইলের সখিপুরে দুই শিক্ষা কর্মকর্তার বাড়ি থাকাই পূর্বে থেকেই ছিল অনেক বেশি সখ্যতা। পরবর্তীতে একই উপজেলা শ্রীপুরে চাকরি করার সুবাদে শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিকদার হারুন-অর-রশিদ।

প্রতিবছর বিদ্যালয়গুলোতে স্লিপ, ক্ষুদ্র মেরামত ও রুটিন ম্যান্টিনেন্সের বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু ওই দুই শিক্ষা কর্মকর্তা ঘুষ ছাড়া বরাদ্দের কাগজে সহিই করেন না। প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে স্লিপ বরাদ্দের জন্য দিতে হয় বিভিন্ন অংকের টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা জানান, চলতি অর্থ বছরে উপজেলার ১৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার কাজের জন্য (স্লিপের অর্থ) প্রত্যেক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ৪০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা করে অর্থ বরাদ্দ আসে। এসব অর্থ উত্তোলন করতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে টাকা দিতে হয়েছে।

শিক্ষা কর্মকর্তা এমন থাকার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা। কাজ না করেই সরকারি অর্থ উত্তোলন করছেন ভুয়া ভাউচার দিয়ে । এসব বিষয়ে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। শ্রেণিকক্ষ সুসজ্জিত এবং পকেট বোর্ডের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রধান শিক্ষকদের না দিয়ে ওই দুই শিক্ষা কর্মকর্তা মিলে কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলায় "মুক্তি মেলা-২০২২ এর খরচ বাবদ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ। বিষয়টি জানাজানির পর সমালোচনার মুখে টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

অফিস ফাঁকি দিয়ে নারী শিক্ষিকাদের জন্মদিন পালন করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে। এসব ছবি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা।

২০০৬ সালে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে চাকরী জীবন শুরু করেন নূর মোহাম্মদ। ইতিপূর্বে কর্মস্থল গুলোতে রেখেছেন অনিয়ম দুর্নীতির ছাপ।  শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসেও শুরু করেন একই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি। এ সকল বিষয়ে প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন  উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সিকদার হারুন-অর-রশিদ।

সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সিকদার হারুন-অর-রশিদ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসে। পুনরায় শ্রীপুরে চলে আসেন সিকদার হারুন-অর-রশিদ। এসেই শুরু করেন বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় জমিও কিনে ফেলেছেন এই স্টেশনের একাধিক স্থানে।

বেলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদুল হাসান জালাল জানান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সিকদার হারুনুর রশিদ স্যারের নির্দেশে এবং উনার তত্ত্বাবধানে দুটি শ্রেণিকক্ষের রঙের কাজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার কোন কিছু করার নেই আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হয়েছে। অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি মাওলানা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আমি এই স্কুলের সভাপতি হওয়া সত্বেও না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে উনার তত্বাবধায়নে স্কুলের সমস্ত কাজকর্ম করে থাকেন। আমি অত্র স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থাকা সত্ত্বেও স্কুলের উন্নয়নের কাজের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি কখনো। এমনকি আমার কমিটির সদস্য এবং আমার সহ-সভাপতিও বিষয়টি জানেনা।

ধনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে স্কুলের উন্নয়নের সকল কাজকর্ম করে থাকেন। গত কয়েকদিন আগে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা মিলে দুটি কক্ষের রঙের কাজ করেছেন। এবিষয়ে আমাকে কোন কিছু জানানো হয়নি।
 
এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে রবিবার দুপুরে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা হলে এসব বিষয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সিকদার হারুন-অর-রশিদ বলেন,আমার বিরুদ্দে আনিত অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যা বানোয়াট। কেউ যদি এই বিষয়ে কোন প্রমান দেখাতে পারে আমি আমার জীবনে আর কোনদিন কর্মস্থলে যাবনা।

গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, কাজ ছাড়া যদি কোন বাউচার দিয়ে সরকারি বরাদ্দের টাকা উঠানো হয় তবে এটা অনিয়ম। এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা প্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরে সরকারি বরাদ্দের টাকাগুলো উঠানো হয়। প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি সমন্বয় করেই সরকারি বরাদ্দের কাজ করতে হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত