বন্ধ ভবনে মাদক ও জুয়ার আসর

শ্রীনগরে ৪ বছরেও চালু হয়নি ইনস্টিটিউট হেলথ টেকনোলজি

  নজরুল ইসলাম, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৯:৪৪ |  আপডেট  : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৪৮

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) বন্ধ ভবনগুলোতে অন্ধকার নামলেই বসছে জুয়া আর মাদকের আসর। হচ্ছে অনৈতিক কর্মকান্ডও। স্থানীয়রা বলছেন, রাতে ক্যাম্পাস জুড়ে এক ধরনের ভুতরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এর কার্যক্রম এখনও চালু হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ঠিকাদারের কাছ থেকে এটি ৪ বছর আগেই বুঝে নিলেও চালুতো দূরের কথা, বিশাল বিশাল ভবনগুলো দেখভাল পর্যন্ত করা হচ্ছেনা। তাই এখন নানাভাবে তফরুপ হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) কর্তৃক ৩ একর জমির ওপর নির্মিত ৬টি বহুতল ভবনই এখন অরক্ষিত। প্রায় ২ বছর আগে পুড়ে গেছে এখানকার বিদ্যুৎতের সাব-স্টেশন। এখন সন্ধ্যা নামলেই পুরো এলাকা বিদ্যুৎহীন অন্ধাকার। শ্রীনগরে সরকারের ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি নষ্ট হচ্ছে শীততাপ নিয়ন্ত্রকসহ নানা যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র। একাডেমিক ভবন, ছাত্রী হোস্টেল, অফিসার্স কোয়াটার, প্রিন্সিপাল ভবন, ছাত্র হোস্টেল এবং কর্মচারী কোয়াটার এই ৬টি বহুতল ভবনই এখন অরক্ষিত। ক্যাম্পাস জুড়ে ঘনবন। ভাগ্যকুল এলাকার নাগরনন্দি খালের তীরে ঢাকা-দোহার আন্ত:সড়কের কাছের নান্দনিক পরিবেশে নির্মিত প্রতিষ্ঠানটির রাস্তাও সংস্কার জরুরী। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে নির্মিত ইনষ্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’র বন্ধ ভবনগুলোতে অন্ধকার নামলেই বসছে জুয়া ও মাদকের আসর। হচ্ছে অনৈতিক কর্মকান্ড। স্থানীয়রা বলছেন রাতে ক্যাম্পাস জুড়ে এক ধরনের ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রায় ৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এর কার্যক্রম এখনও চালু হয়ে উঠেনি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ বিশাল এই ক্যাম্পাসের কোনও খোঁজখবর রাখছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন নতুন ইনস্টিটিউট চালু করা গেলে দেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে টেকনোলজিস্ট সঙ্কটের অবসান ঘটবে। 

স্বাস্থ্য সেবায় আসবে বিশেষ গতি। শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তোহা শাকিল জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় এমপি ও ইউএনও মহোদয়কে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রতিষ্ঠানের বন্ধ ভবনগুলোতে বসছে মাদক ও জুয়ার আসর। ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের মধ্য কামারগাঁও (নাগরনন্দি) এলাকায় নির্মিত ইনষ্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’র ভবনগুলো নানাভাবে নষ্ট হচ্ছে। মূল ফটকে প্রবেশ করতেই দেখা মিলে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণজুড়ে আগাছা ও ঘনবনে ছেঁয়ে গেছে। চরানো হচ্ছে ছাগল। শুকানো হচ্ছে জামা কাপড়। দেখা মিলেনি কোন নৈশপ্রহরীর। নজরদারির অভাবে ক্যাম্পসে বহিরাগত মানুষ খুব সহজেই ক্যাম্পাস ও ভবনের ভিতরে যাতায়াত করতে পারছে। লক্ষ্য করা যায়, প্রিন্সিপাল ভবনের কেচি গেইটে কোন তালা নেই। দু’তলা ভবনটির কক্ষগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে খেলার (তাস) কার্ড, মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ, কাঁথা-বালিশ ও ময়লা আবর্জনা। এলাকাবাসী জানায়, সন্ধ্যা নামলেই এখানে মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। গভীর রাতে শুরু হয় জুয়া, মাদক ও অনৈতিক কর্মকান্ড। কোন গার্ড ও নজরদারী না থাকার ফলে অন্ধকার পরিবেশে এ প্রতিষ্ঠানটি এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ স্থান। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি যদি চালু করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ এর সুফল ভোগ করতে পারবে। এখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হবে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে এ অ লের মানুষের আর্থ সামাজিক ও জীবনযাত্রার মান বাড়বে। প্রতিষ্ঠানটি চালুর জন্য সংশ্লিষ্টজনদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর মধ্য কামারগাঁও এলাকায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’র শিলান্যাস তথা ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। তৎকালীন সচিব আখতারী মমতাজ এটি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। প্রতিষ্ঠানটি নির্মিত হওয়ায় পুরো এলাকায় নানা সম্ভাবনা হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় থাকার কথা ছিল মূখর। আর নজরদারীর অভাবে প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান জিনিসপত্র বিনষ্ট হচ্ছে। 

মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম জানান, জনবলের অভাবে এটি চালু করা যায়নি। সেখানে একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সেও নেই। তবে আগামী সেশনে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তির চিন্তাভাবনা রয়েছে। এটা চালু হলে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশের পর রেডিওলজি, ল্যাব, ডেন্টাল ও ফার্মেসি এই ৪ ট্রেডের প্রতি সেশনে ২শ’ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থাকবে।
 

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত