শ্রীনগরে টানা বর্ষণে এক হাজার হেক্টর আলু ও সরিষা জমি পানির নীচে

  নজরুল ইসলাম, শ্রীনগর,মুন্সীগঞ্জ  

প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৫৭ |  আপডেট  : ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৮

ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত দুদিনের টানা বর্ষণে শ্রীনগরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর আলু ও সরিষা জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। সদ্য রোপন করা এসব জমির আলু বীজ ও সরিষা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে বোর ধানের বীজতলা। 

গত বছর আলুর দাম না থাকায় চাষীরা লোকসানে পরেছিল। এবছর লোকসান পুষিতে নিতে পারবে এই ধারনা থেকে তারা জমি, স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে চড়া সুধে ঋণ নিয়ে আলু চাষের জন্য পুঁজি সংগ্রহ করে। কিন্তু শুরুতেই এতো বড় ধাক্কা সামলে উঠা বেশীর ভাগ চাষীর জন্য দুরহ হয়ে যাবে। 

সোমবার দুপুরে সরজমিনে উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের সালেপুর,বীরতারা,মাশাখোলা, আটপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব দেউলভোগ সহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র।
 
আলুর জমির উপরে বৃষ্টি পানি জমে নৌকা চলার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেককে দেখা গেছে সেচ দিয়ে জমির পানি সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে। কামাল শেখ নামের এক আলু চাষী জানান, জানি পানি সেচে কোন লাভ হবে না, তারপরও মনকে মানাতে পারছি না। গত বছর লোকসান হয়েছে। এবছর ধার দেনা করে চাষে নেমেছিলাম। ভেবেছিলাম এবছর দাম ভাল পেলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু শুরুতেই এমন হয়ে গেল। কথাগুলো বলতে বলতে তার গলা ধরে আসে। তিনি আরো জানান, প্রায় ৭ বিঘা জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে সার-বীজ-শ্রমিক ও জমির দামের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় লাখ। এখন জমির পানি নেমে গেলেও সার-বীজ-শ্রমের পেছনে নতুন করে খরচ হবে। এই টাকা কোথায় পাব?

ফরিদ হোসেন জানান, জমির দিকে তাকালে কষ্টে এমনিতেই চোখে পানি চলে আসে। পানি নেমে গেলে নতুন করে বীজ আলু পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। অনেকে হয়তো এই বছর আর আলুর আবাদ করতে পারবে না।

বোর ধানের আগে শ্রীনগরে অনেক জমিতেই সরিষার আবাদ হয়। এজন্য পরি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে অনেকেই সরিষা চাষ করেছেন। সরিষা গাছের বেশীর ভাগের মুখে এখন ফুল। এমন অবস্থায় সরিষার জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তা পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আর সরিষা আবাদের সুযোগ নেই। 

বোর ধানের আবাদের জন্য কৃষকরা বীজতলা তৈরি করে তাতে বীর ধান ফেলেছেন। বৃষ্টির কারনে আর এগুলো হবে না। 

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রাণী জানান, এই বছর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে ২ হাজার ২শ হেক্টর। এরই মধ্যে সরকারী হিসাবে প্রায় ৬শ ২০ হেক্টর জমিতে আলু বপন করা হয়েছে। পুরোটাই এখন পানির নীচে।সরিষা আবাদ করা হয়েছে ৪শ ৬৫ হেক্টর জমিতে। এর পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। সাথে বোর ধানের বীজ তলাও নষ্ট হচ্ছে। পানি না সরে যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। ক্ষতির মধ্যে পরা কৃষকদের প্রণোদনার জন্য উর্ধতনদের কাছে আবেদন করা হবে।

শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ জানান, অনাকাংখিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে কৃষক চাষীরা দুর্ভোগে পরেছে। কৃষি অফিসকে সাথে নিয়ে কৃষকদের সাথে বসে ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা হবে। তাদেরকে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদানের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত