শ্রীনগরে আড়িয়াল বিলের কৃষি জমির মাটি লুট ওভারলোডিংয়ের কারণে নষ্ট করা হচ্ছে গ্রামীন রাস্তাঘাট
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৪৫ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫১
আড়িয়ালবিলের কৃষি জমির মাটি কেটে লুট করে নিচ্ছে মাটি সিন্ডিকেটের একটি সংঘবদ্ধ দল। বিলে প্রায় ৪০টি স্কেভেটর কৃষি জমির মাটি কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব মাটি নেয়ার কাজে প্রায় ২ শতাধিক মাহিন্দা ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত টমটক চলাচল করছে। অবৈধ এসব ট্রলির ওভারলোডিংয়ের কারণে নষ্ট হচ্ছে অত্র এলাকার গ্রামীন কাঁচা-পাকা রাস্তা। এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়ার ইউনিয়নের ছত্রভোগ ও জাহানাবাদ এলাকা জুড়ে। ছত্রভোগ সংলগ্ন আড়িয়াল বিল পয়েন্টে ওই এলাকার মোজাম্মেল চৌধুরীর নের্তৃত্বে ও ডাকাত ল্যাংড়া জলিলের নিয়ন্ত্রণে যুবরাজ, সালাম দুবলী, খালেক অপরদিকে একই ইউনিয়নের রুদ্রপাড়ার নিছিমপুর সংলগ্ন আড়িয়াল বিল অংশে আব্দুর রশিদ, ইমরান, আতাহার, হারুন, চঞ্চল ভূইয়াসহ বড় একটি সিন্ডিকেট মহলে কারসাজিতে বিলের শতশত হেক্টর আবাদি জমির মাটি লুট করে কোটি টাকার বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে আড়িয়াল বিলে এয়ারপোর্ট বিরোধী ও মাটি সিন্ডিকেটটির ভয়ে স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতনমহল আড়িয়াল বিলের দস্যু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মী হয়ে পরেছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঘড়ার ছত্রভোগ ও রুদ্রপাড়া আড়িয়াল বিলের অংশে বেশ কয়েকটি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রলিতে ভরা হচ্ছে। মাটি টানার কাজে প্রায় শতাধিক মাহিন্দ্রা ও টমটমসহ ড্রামট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। এতে করে শ্রীনগর-দোহার সড়কের সংযোগ রাস্তা হিসেবে পরিচিত ছত্রভোগ-জাহানাবাদ প্রায় ২ কিলোমিটার পাকা সড়কটিতে ওভারলোডিংয়ের কারণে প্রায় বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়াও রুদ্রপাড়ার নিছিমপুর একটি কাঁচা রাস্তায় এসব মাটি ট্রলির কারণে সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়ার বর্ষায় এসব মাটি বিক্রির জন্য আড়িয়াল বিলের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য টিলা/স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, দিন রাত সমান তালে এসব মাটির ট্রলি ওই রাস্তায় চলাচলের কারণে ধূলা বালিতে নাকাল হচ্ছে রাস্তাঘাটসহ বাড়িঘর। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন তারা। বিশেষ করে বৃদ্ধসহ শিশুরা মারাত্মক শ্বাষ কষ্টে ভোগছেন। প্রতিবাদ করার ভাষা নেই। কারণ হিসেবে তারা জানায় যারা মাটি বিক্রি করছেন তারা প্রভাবশালী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তো সবই জানেন, তারাও কিছু বলেন না?
স্থানীয় কৃষক শফিকুল (৬০) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বিলে নিজের ৭০ শতাংশ জমিতে ইরি ধান রোপন করেছিলেন। দুঃখের বিষয় বাধ্য হয়েই এখন জমিতে যাইনা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিলের নিছিমপুর অংশে তার জমিটি স্কেভেটর দিয়ে সমান করে দেয়ার নামে জমির সব মাটি কেটে নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একটি সূত্র জানায়, এই এলাকার মাটি সিন্ডিকেটের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী দোহারের একটি প্রভাবশালী মহলের সহোগীতায় আড়িয়াল বিলের মাটি কেটে নিচ্ছে। যদি কেউ মাটি সিন্ডিকেটের বিষয়ে কথা বলে তাহলে রাতের আঁধারে চলে নির্যাতন। এতে করে ভূক্তভোগী কেউ সিন্ডিকেটটির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি ট্রলি কৃষি জমির মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। দূরুত্ব ভেদে এর দাম কম বেশীও হতে পারে। এখানকার বেশীর ভাগ মাটি বাঘড়াসহ দোহার এলাকার ফুলতলায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় কয়েক লাখ টাকার মাটি কেনা-বেচা হচ্ছে। অন্যদিকে সিন্ডিকেট মহলটি আড়িয়াল বিলের বিভিন্ন স্থানে এসব মাটি কেটে পাহাড় সমান উঁচু করে রাখছে। জোয়ারের পানি আসার সাথে সাথে ট্রলার ও বাল্কহেডে করে এসব মাটি বিক্রির উৎসব শুরু হবে। আড়িয়াল বিলের এই মাটি সিন্ডিকেটের প্রায় সদস্যর বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। সিন্ডিকেটটি আড়িয়াল বিলে এয়ারপোর্ট বিরুধী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
আব্দুর রশিদের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাটি বিক্রি করেছি। এখন কে কেটে নিচ্ছে তা আমি জানিনা।
মোজাম্মেল চৌধুরীর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুদিন যাবত মাটি কাটছি। বিলে তো অনেকেই জমির মাটি কাটছে আমি তো একা নই? ট্রলির ওভারলোডিংয়ের কারণে সরকারি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দম্ভ করে বলেন, রাস্তা ভাঙলে রাস্তা হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
শ্রীনগর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ’র কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি ওভারলোডিংয়ের কারণে রাস্তাটি বেহাল করা হচ্ছে। উপজেলায় আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করবো।
এব্যাপরে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। কৃষি জমির মাটি কাটা যাবেনা। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত