শুধু অস্ত্র নয়, ইসরায়েলি পণ্য বর্জনেও যুদ্ধ করা যায়: ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত
প্রকাশ: ২০ মে ২০২১, ২১:৩৮ | আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫০
ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বৃহস্পতিবার (২০ মে) রাজধানীতে ফিলিস্তিন দূতাবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধের অংশ হিসাবে ইহুদী পণ্য তরল পানীয় পেপসি, কোকাকোলা ও ইউএস ডলার বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মুসলমানদের পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও জনগণকে রক্ষার জন্য সবাইকে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে হবে এমন নয়, অন্যভাবেও সাহায্য করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র নিজেরাই ভিয়েতনামে পরাজিত হয়েছে। কেউ যদি আমাদের জন্য সংগ্রাম করতে চায়, তাহলে বিভিন্নভাবে সংগ্রাম করা যায়। ইচ্ছাটাই বড় কথা। বিভিন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিরোধ করা যায়। আমাদের মুসলিম বিশ্বের সবাইকে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে এমন নয়। অথবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে হবে না। এটা আমাদের দরকার নেই। আমরা যদি পেপসিকোলা, কোকাকালা তিন মাস পান করা বন্ধ করি, তখন তারা চিৎকার করতে থাকবে। আমরা যদি এক সপ্তাহ ইউএস ডলার ব্যবহার করা বন্ধ করি তাহলে এর ফলাফল কী হয় আপনারা দেখতে পাবেন। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রেরে পণ্য কেনা বন্ধ করি তাও কাজ হবে। এভাবে আমরা অনেক কাজ করতে পারি। সুতরাং অস্ত্র নিয়ে সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করতে হবে এমনটা নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা পবিত্র ভূমির জন্য যুদ্ধ করছি। আমাদের কেউ শেষ করতে পারবে না। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের নাগরিক অধিকার ৭৩ বছর ধরে বঞ্চিত। ইসরায়েল প্রমাণ করেছে, তারা শুধু ফিলিস্তিনের শত্রু না, তারা মানবতার শত্রু, তারা আন্তর্জাতিক কমিউনিটির শত্রু, তারা পৃথিবীর শত্রু। সেজন্য আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি করি, তাদের এ ব্যাপারে অবশ্যই কিছু করতে হবে। ফিলিস্তিনি জনগণের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, স্বাধীনতা, মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। অন্যদের মতো জন্মগ্রহণ করা মানুষের মতো আমরাও মানুষ। পৃথিবীর অন্যান্য মানুষদের মতো আমরাও স্বাধীন। মানুষের প্রধান এসব মৌলিক অধিকার নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা সোচ্চার। তারা নিজেরাও এটি উপভোগ করে। কিন্তু যখন ফিলিস্তিনের বিষয় আসে তখন ইউরোপ-আমেরিকা নিশ্চুপ থাকে। এ ধরনের দ্বিচারিতা বন্ধ হওয়া উচিত।
ইউসুফ রামাদান বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। সেখানে আমাদের শিশু, নারী, আমাদের বয়স্ক লোক এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও তাদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এটি বন্ধ করতে হবে। বিশ্বকে এ ব্যাপারে অ্যাকশন নিতে হবে। তারা নিন্দা জানাচ্ছে, মিটিং করছে, কিন্তু এসব কোনো কাজে আসছে না। কারণ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক দাবি বা আহ্বানকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিন বলেন, ইসরায়েল যা ইচ্ছা তাই করছে। মধ্যপ্রাচ্যে কখনো শান্তি, সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা হবে না, যতক্ষণ না ফিলিস্তিনিরা স্বাধীনতা পায়। ফিলিস্তিনের ভাগ্য ফিলিস্তিনিরা নির্ধারণ করবে। অন্যরা না। ফিলিস্তিন একটি পবিত্র জায়গা। ইসলামের প্রথম কেবলা। আমাদের যতই ক্ষতি হোক না কেন আমরা সেটি রক্ষা করে যাব। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নারী, মা-বোনরা শিশু জন্ম দেবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বেঁচে থাকব, ততদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের পবিত্র জায়গা রক্ষা করে যাব।বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সহযোগিতা করছে জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ৩ হাজার মাইল দূর থেকেও বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে। একই সময় বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে বিশ্ব ও ইসরায়েলকে জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিনিরা একা নয়। আমরা বাংলাদেশের মানুষের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমি সাতদিন ধরে দেখছি, বাংলাদেশিরা আমাদের ঢাকার দূতাবাসে আসছে সাহায্য করার জন্য। অনেকে বিভিন্ন কাজ ফেলে আমাদের এখানে আসছে, আমাদের দেশের মানুষের জন্য সহমর্মিতা জানাতে। প্রায় প্রত্যেক রমজান কিংবা ঈদের সময় ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিদের ওপর বোমা হামলা শুরু করে এবং ফিলিস্তিনের মুসলিমদের হত্যা করার চেষ্টা করে।
এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের জনগণ মুসলিম উম্মাহর জন্য লড়াই করছে। কারণ ফিলিস্তিন শুধু আমাদের জন্য নয়, এটা বিশ্বের প্রত্যেক মুসলমানের। যারা হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর উম্মত তাদের। আমরা প্রত্যেকের পক্ষে যুদ্ধ করছি। বিশেষ করে নেতানিয়াহু মুসলমানদের পবিত্র রাত লাইলাতুল কদরে আগ্রাসন চালিয়ে প্রমাণ করেছিল, মুসলিম বিশ্বের প্রতি তার কোনো সম্মান নেই। তিনি এভাবে প্রত্যেক মুসলমানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের জনগণ ও নেতারা দেখিয়ে দিয়েছেন, নেতানিয়াহু আপনি ভুল। আপনি যে দায়িত্বে আছেন, সে কাজের জন্য আপনি উপযুক্ত নন। ইসরায়েল প্রশ্নে আরব বিশ্বের দ্বিধাবিভক্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। এই বিভাজন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দুর্বল থেকে আরও দুর্বলতর করে তুলছে। তবে আমরা কিন্তু সেজন্য বসে থাকব না, কাঁদবও না। আমাদের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের সংগ্রাম আমরা চালিয়ে যাব। যেই আমাদের সাথে যুক্তে হতে চাইবে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। কিন্তু আমাদের কাজ আমাদেরই করতে হবে। এটা আমাদের ভূমি, আমাদের বাড়ি, আমাদের দেশ। কিন্তু আরব বিশ্ব তাদের স্বার্থের কারণে বিভক্ত। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমেরিকা ইসরায়েলকে সাপোর্ট করলেও আবর বিশ্বকে আমাদের সাহায্য করার ইচ্ছা থাকতে হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত