২‘শ কৃষকের ক্ষতি হবে ৫০ লক্ষ টাকা

লবন পানিতে নষ্ট হচ্ছে দুইশ বিঘা জমির ধান

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ১৩:১৭ |  আপডেট  : ১৮ মে ২০২৪, ০৮:৫৮

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষা উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের অন্যতম নদী বেষ্টিত উপজেলা রামপাল। ৩৩৫ বর্গ কিলোমিটারের এই উপজেলায় পশুর, মরা পশুর মোংলা- ঘষিয়াখালী চ্যানেলসহ ৫০টির অধিক নদী-খাল রয়েছে। এসব নদী ও খালের পানি লবনাক্ত হওয়ায় এই এলাকার বেশিরভাগ ধানীজমি অনাবাদি থাকত। দীর্ঘদিন পরে পেরিখালি ও রাজনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এ বছর ইরি মৌসুমে কিছু নদী ও খাল আটকে বাঁধ দিয়ে মিঠা পানির সংস্কার করে ধান চাষ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু চিংড়ি মাছের পোনা ছাড়ার সময় হওয়ায়, প্রভাবশালী ঘের মালিকরা খাল কেটে ধানের জমিতে লবন পানি প্রবেশ করাচ্ছে। চিংড়ি চাষের জন্য ওঠানো লবন পানিতে পচে যাচ্ছে কৃষকের কষ্টের ফসল। এর ফলে দুই শতাধিক কৃষকের ৫০ লক্ষ টাকার উপরে ক্ষতি হবে। তবে ১৫-২০ দিন পরে প্রবেশ করালে ধানের ক্ষতি হতনা বলে দাবি কৃষকদের। ১৫ দিনের সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোন সুফল পায়নি হতদরিদ্র কৃষকরা। 

বুধবার (০৮ মার্চ) সকালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মধ্য থেকে যাওয়া কালেখারবেড় এলাকার ঘরের খালের বাঁধ কেটে মৎস্য ঘেরে পানি ঢুকিয়েছেন জুলু হাজীসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। লবন পানিতে কৃষকের ধান পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দুই তিনদিনের মধ্যে এসব ধানের গোড়া পচে নষ্ট হয়ে যাবে দাবি কৃষকদের। শুধু কালেখারবেড় নয়, রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের সিংগুরবুনিয়া, রনজয়পুর ও আড়ুয়াডঙ্গা এলাকায়ও একই ভাবে ধান চাষ কেরেছন কৃষকরা। এসব এলাকার ঘের ব্যবসায়ীরা এখন খাল কেটে লবন পানি ঢোকানের পায়তারা করছেন। কৃষকদের কোন আবেদন কর্ণপাত করছেন না তারা। 

কালেখারবেড় এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ সবিতা হাসলাদার বলেন, 'গরু বিক্রি করে এবং এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৬বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ১৫-২০ দিন পর ধান ঘরে তুলতে পারতাম। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাঁধটি কেটে দেওয়ায় লবন পানি ঢুকে ধান গাছ সব মরতে শুরু করেছে। অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনেনি। একই গ্রামের কৃষক হুমাউন কবির বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ নিয়ে ধান চাষ করেছিল। তখন লবন পানি ঠেকাতে সকলের সম্মতি নিয়ে কালেখার খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘেরে লবন পানি প্রবেশ করাতে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঁধটি কেটে দেয়। বাঁধটি কাটার আগে চেয়ারম্যান, কৃষি অফিসার ও ইউএনওকে বিষয়টি জানিয়েছি। ধান কেটে ঘুরে তোলার জন্য মাত্র ১৫দিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি। রাজনগর ইউনিয়নের সিংগুরবুনিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, সবার অনুমতি ও সম্মতি নিয়ে খাল কেটে আমরা তিন গ্রামের শতাধিক কৃষক প্রায় একশ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী শেখ মোতাহার আলী, মোকছেদ শেখসহ কিছু ঘের ব্যবসায়ী একই এলাকার চামারখালী ও দোয়ানে খালের বাঁধ কেটে লবন পানি প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। এই খাল কেটে লবন পানি ঢোকালে আমাদের ধান সব নষ্ট হয়ে যাবে। একই এলাকার দবির উদ্দিন নামের আরেক কৃষক বলেন, মাত্র ১৫ দিন পরে লবন পানি প্রবেশ করালে আমাদের ধানের কোন ক্ষতি হত না। যেকোন মূল্যে লবন পানি প্রবেশ ঠেকানো প্রয়োজন। তা না হলে আমাদের অপূরনীয় ক্ষতি হবে। পথে বসা লাগবে এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষকের। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, উপজেলার অন্তত ৩০টি খাল আটকে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছেন। তাতে কিছু হয় না, আমরা শুধু কয়েক দিনের জন্য আটকে ধান চাষ করেছিলাম এটাই আমাদের অপরাধ। কারণ আমরা গরীব।

রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতানা পালভিন বলেন, ধান চাষের জন্য সকল কৃষকরা একমত হয়ে খাল আটকে ধান চাষ শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেকিছু ঘের ব্যবসায়ী পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করতে চায়। এ কারনে মাছ চাষিরা বাঁধটি কেটে দিয়েছে। মানবিক কারনে চাষিদের ১৫দিন সময় দেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, কাউকে সরকারি খাল আটকে রাখার অনুমতি দিতে পারি না। তবে ঘের ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মাঝে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল সেটা সমাধানের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সমাধান করবেন। এছাড়া খাল না আটকে অন্য কোনভাবে ধান চাষ করা যায় কিনা, সে বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে আলোচনা করে কাজ করার পরামর্শ দেন উপজেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত