লকডাউন মেনে চলার আহ্বান ও পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত প্রধানমন্ত্রীর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩ জুলাই ২০২১, ২১:২৬ |  আপডেট  : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:২২

দেশের অধিকাংশ জনগণকেই টিকার আওতায় নিয়ে আসার এবং সবসময় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লকডাউন মেনে চলে করোনা প্রতিরোধের জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লকডাউন ঘোষণা করেছি। আপনারা অন্ততপক্ষে নির্দেশনাগুলো মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন এবং অন্যকেও সুরক্ষিত করেন, যেন করোনা আর বাড়তে না পারে।’ তিনি বলেন, ‘টিকা আসতে শুরু করেছে। কোন অসুবিধা হবে না। সারাদেশে আমাদের মানুষ যাতে সুরক্ষিত থাকে তার ব্যবস্থা আমরা করবো।’

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে একাদশ সংসদের ত্রয়োদশ (২০২১-২২ বাজেট অধিবেশন) অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত  ধৌত করা এবং বাড়ি গিয়ে গরম পানির ভাপ নেয়া এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে গরগরা করার মত সাধারণ এবং করোনা প্রতিরোধে অবশ্য পালনীয় হিসেবে স্বাস্থ্যবিধিগুলো স্মরণ করিয়ে দেন। 

তিনি বলেন, এগুলো মানতে পারলেই এই রোগের বিস্তারকে আমরা রোধ করতে পারবো। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে বলবো আমরা লকডাউন ঘোষণা করেছি আপনারা অন্ততপক্ষে নির্দেশনাগুলো মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন এবং অন্যকেও সুরক্ষিত করেন।’

টিকার বিষয়ে আর কোন সমস্যা হবে না এবং দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসায় তাঁর সরকারের পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, টিকা আসতে শুরু করেছে। কোন অসুবিধা হবে না। মানুষ যাতে সুরক্ষিত থাকে তার ব্যবস্থা করবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভারত থেকে করোনা টিকা কেনার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু ভারতে করোনা বেড়ে যাওয়ায় তারা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে কিছুদিন আমাদের সমস্যা হয়েছিল। এখন আর সমস্যা নেই। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা এসে গেছে, আরও আসবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২ জুলাই রাতে এবং আজ সকালে মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা আসার কথা উল্লেখ করে বলেন, যেখানে টিকা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে আমরা যোগাযোগ করছি। আরও কিনে আনবো। চীন, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র সব জায়গায় আমরা যোগাযোগ রেখেছি। 

তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি আমরা ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনবো। বিনামূল্যে টিকা দেয়া হচ্ছে। আমরা অনেক টাকা দিয়ে টিকা কিনে এনেছি। কিন্তু জনগণের স্বার্থে বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছি। আমরা সব কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার দেই গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের।

তিনি বলেন, টিকা দেয়ার পর স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে। শিশুদেরও করোনা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেনেশুনে শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবো কিনা বিরোধী দলের উপনেতা ও সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তাঁদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা প্রশ্ন  করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা জেনেশুনে শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই একই অবস্থা। বাবা-মায়েরা চায় না তাদের সন্তানরা এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাক। আর যাদের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলে-মেয়ে নেই তারা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলেন। বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও অধিবেশনে বক্তৃতা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের উপহার হিসেবে ‘কোভ্যাক্স’ সুবিধার আওতায় মডার্না ও চীনের সিনোফার্ম চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে করোনা প্রতিষেধক টিকা সরবরাহ করেছে। পূর্ব-নির্ধারিত সময়েই দেশ দু’টি থেকে পাঠানো মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। যার মধ্যে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ এবং সিনোফার্মের ২০ লাখ ডোজ।

তাঁর সরকার বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে যে বয়স থেকে টিকা দেওয়া যায় সে সব নিয়ে চিন্তা করছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্য়ায়ে টিকা প্রদান পুনরায় শুরু করেছে, বলেন তিনি।

করোনা মোকাবেলায় জনগণের ঘরে অবস্থান ধরে রাখতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ঈদুল ফিতরের সময় আমরা অনুরোধ করলাম আপনারা আপনাদের জায়গা ছেড়ে যাবেন না। কিন্তু অনেকেই সে কথা শোনেনি, ছুটে চলে গেছে। তার ফলাফলটা হলো বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে করেনাটা ছড়িয়ে পড়লো।

তিনি বলেন, সকলে সরকারের কথা শুনলে হয়তো সারাদেশে এমনভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়তো না। এটা হলো বাস্তবতা। তাঁর সরকার তারপরেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, শুধু সরকার নয় তাঁর সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাধ্যমেও নানা সহযোগিতা মানুষকে অব্যাহত সরকার রেখেছে।

করোনা মোকাবেলায় তাঁর সরকারের ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এমন কোন শ্রেনী পেশার মানুষ নেই যাঁদেরকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, আবারো করোনা দেখা দেওয়ায় তাঁর সরকার আর্থিক সহযোগিতাটি পুণরায় চালু করার মাধ্যমে কারো যেন খাদ্যের অসুবিধা না হয় সে বিষয়টি দেখবে।

শিক্ষার মান কমেছে বলে বিরোধী দলীয় উপনেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে নয় অতীত সরকারের কর্মকান্ডের কারণেই শিক্ষার মান কমেছে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ প্রচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীট ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের একটি বিষয়ে ৫২ জনকে ফাস্ট ক্লাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া, অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস তো রয়েছেই। এ সবের জন্য শিক্ষার মান আদতেও কমেছে বলে স্বীকার করেন প্রধানমন্ত্রী।

 জণগণের কল্যাণেই তাঁর সরকার কাজ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতি প্রসঙ্গে বলেন, এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে এই ধরণের বন্যা মাঝে মাঝেই আসবে এবং তাঁবে মোকাবেলা করেই আমাদের চলতে হবে।

জাতীয় সংসদে আজ ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট বিল, ২০২১’ পাশের মাধ্যমে এটিকে চলচ্চিত্র শিল্পে জড়িত কলা-কুশলীদের সহযোগিতার আরেকটি ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ‘হাজার হাজার শিল্পী কলা-কুশলী ও যন্ত্রী’কে আমরা সাহায্য করেছি এমনকি রিক্সার পেছলে যারা বিজ্ঞাপনের ছবি আঁকার কাজ করেন তাদের জন্য ও করা হয়েছে,’ বলেন তিনি।

বিএনপি দলটির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এমন একটি দল যে দল সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক জান্তা। তিনি সেনাপ্রধান কখন হয়েছেন? ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যে পরিকল্পনা হয় তার মূল শক্তি ছিল এই জিয়াউর রহমান, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, খুনি কর্নেল রশিদ এবং ফারুকের বিবিসিকে দেয়া ইন্টারভিউতে এটি স্পষ্ট রয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের সঙ্গে না থাকলে কোনো দিনও এ ষড়যন্ত্র করতে পারত না। কারণ, জিয়াউর রহমান ছিলেন উপ- সেনাপ্রধান।

বিএনপি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আবার রাজনীতিবিদ হন। উর্দী পড়ে ক্ষমতায় এসে পরে রাজনীতিতে নাম লেখান। সেখান থেকে পরে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। সেই দলই হলো বিএনপি।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে দেয়া বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুরআন শরিফে নাকি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা নেই। আমি বলব অবশ্যই আছে। আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল হতে। কোরআন শরিফে আছে লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন অর্থাৎ যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যার যার মতামত সে প্রকাশ করবে। এতে প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাই আসে। হ্যাঁ অবশ্যই নিজের ধর্ম পালনে সবসময় গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল থাকতে হবে। এটা আমাদের শিক্ষা। এটা নবী করিম (সা.) সব সময় বলে গেছেন। কাজেই, এ ধরনের কথা সংসদে না বলাই ভালো।

 দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচারব্যবস্থায় যত উন্নয়ন হয়েছে, তার সবটাই হয়েছে আওয়ামী লীগের সময়। বিএনপির আমলে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়েও বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের সময় এক ছাত্রদল নেতার ঘাড়ে হাত রেখে আলোচনা করে বিচারপতির রায় দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও ভোট চুরির সুযোগ তৈরির জন্য প্রধান বিচারপতির মেয়াদ বাড়িয়ে তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার বিষয়টিও করেছিল বিএনপি।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত