রাহুলের বাড়িতে আগুনের ঘটনা সত্য, তবে সাম্প্রয়ায়িক সংঘাত নয়
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৯ | আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:৪২
বাইরে জনতার বিজয় মিছিলের চিৎকার। হঠাৎ দেখলাম পিছনের সবগুলো বাড়িতে আগুন। আমরা মুহূর্তেই দিশেহারা হয়ে পড়লাম। বুঝলাম ৩২ এর সবগুলো বাড়িতেই আগুন লাগানো হয়েছে। আমাদের বাড়িটা সান্তুর রেস্টুরেন্টের পিছনে। পাশে আমাদের বাড়িওয়ালা আইনুল হক-এর তিনতলা বাড়ি, সেখানে প্রথম ভাঙচুর হয় ও আগুন দেয়। যখন সান্তুরের গেট দিয়ে উল্লাসে জনতা ঢুকে পড়েছে আর সান্তুরে আগুন ধরাচ্ছে, তখন আমরা বুঝতে পারছিলাম না কী করবো। আমার যে ঘরভর্তি বাদ্যযন্ত্র।’
কী করেছিলেন তারা? শুক্লা লিখেছেন, ‘তাদের বোঝানোর জন্য এগিয়ে গেলাম পরিবারের সবাই। তারা তখন ৩২ ধ্বংসের উল্লাসে কোনো কিছুই শোনার চেষ্টা করেনি। তবে কিছু মানুষ এগিয়ে এসেছিল, তারা চেয়েছিল অন্যদের বোঝাতে। কেউ কারো কথা শোনার মতো অবস্থায় ছিল না। একজন বললো ১৪ বছরের রাগ... এই এলাকা ধ্বংস করবেই। ... বরং আপনাদেরকে আমরা সাবধানে বের করে দিচ্ছি... আপনারা এখান থেকে চলে যান। ৩২ ধ্বংস করার উন্মাদনায় আমার ঘর পুড়ে গেছে। শুধু আমার নয় আমাদের বাড়ির মালিকের ঘরও পুড়েছে। আশপাশের আরো কিছু বাড়িঘরও পুড়েছে। তারা কেউ নির্দিষ্ট করে আমাদের বাড়ি পোড়াতে চায়নি, চেয়েছে ৩২ এর এই বাড়িগুলো ধ্বংস করতে। আমাদের তো সব গেছে, মানসিকভাবে আমরা বিধ্বস্ত। আমাদের বাস্তবতা আশাকরি সবাই বুঝবেন।’
বাড়িতে আগুন দেওয়ার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছিল রাহুলের দল জলের গান। সেখানে তারা লেখে, ‘এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ? যারা ইতিমধ্যে সেখানে গিয়েছেন, কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছেন, তারা সকলেই খবরটি জানেন।’ ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘এই বাড়িটি আর নেই। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আশীর্বাদে বাড়ির সকল সদস্য নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন। কিন্তু, রাহুল দা এবং আমাদের দলের সকল বাদ্যযন্ত্র, গানের নথিপত্র এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও, দাদার পরিবারের খাট-পালং, আলনা আর যাবতীয় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! সব! সকলের জন্য নিরন্তর ভেবে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারসহ এককাপড়ে তার নিজ ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব হয়তো আজীবন লালিত থাকবে তার সন্তানের মনে, যার বয়স কি না মাত্র ১৩ বছর – ভাবতেই কষ্ট হয়। এতদিন ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে!’
সেদিন যা ঘটেছিল, তার বর্ণনা পাওয়া যায় জলের গানের সাবেক সদস্য সাইফুল জার্নালের কাছ থেকে। ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানে অনেকের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন তিনিও। জাগো নিউজকে জার্নাল বলেছিলেন, ‘সেখানে যারা লুটপাট করতে এসেছিল, তারা রাহুল দাকে চিনত না। শুরুতে লুটপাট করেছে, তারপর ভাঙচুর এবং সবশেষে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আগুন লাগানোর উদ্দেশ্য সম্ভবত কোনো প্রমাণ যাতে না থাকে।’ তিনি এও মনে করেন যে, সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়নি।
সেদিন যা ঘটেছিল, তার বর্ণনা পাওয়া যায় জলের গানের সাবেক সদস্য সাইফুল জার্নালের কাছ থেকে। ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানে অনেকের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন তিনিও। জাগো নিউজকে জার্নাল বলেছিলেন, ‘সেখানে যারা লুটপাট করতে এসেছিল, তারা রাহুল দাকে চিনত না। শুরুতে লুটপাট করেছে, তারপর ভাঙচুর এবং সবশেষে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আগুন লাগানোর উদ্দেশ্য সম্ভবত কোনো প্রমাণ যাতে না থাকে।’ তিনি এও মনে করেন যে, সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়নি।
রাহুলের বাড়িতে আগুনের ঘটনা নিয়ে গত ৯ আগস্ট ফ্যাশন ডিজাইনার ফারহানা হামিদ একটি বিবৃতি দিয়েছেন ফেসবুকে। তিনি লিখেছেন, ‘রাহুল আনন্দর বাসা উদ্দেশ্য করে আগুন দেয়া, লুটপাট বা ভাংচুর করা হয়নি। আগুন দেয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ৩২ এর “বর্তমান বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ”। রাহুলদা একটা একতলা বাসায় ভাড়া থাকতেন। একপাশে তাদের সংসার, অন্যপাশে জলের গানের স্টুডিও (অনেকের ভিডিওতে এই বাসাটা নিয়ে ভুলভাল কথা বলতে দেখেছি আমি)। সেই বাড়িটা ব্যক্তিমালিকানায় ছিল। ৩২-এ এমন আরো অনেক বাসা আছে। রাহুলদা ও তার পরিবারের দুর্ভাগ্য এই মায়াময় বাসাটা নতুন মিউজিয়াম-এর দেয়াল ঘেষে এবং সান্তুরের (রেস্তোরাঁ) পিছনে ছিল, তাই তার বাসাতেও আগুন দেয়া হয়।’
আগুনে পুড়েছে জলের গানের ভোকাল, যন্ত্রশিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়ি। এ নিয়ে গত ৫ আগস্ট থেকে শুরু হয় নানামাত্রিক আলোচনা, সমালোচনা, নিন্দা। এমনকি ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমও রাহুলের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার শুরু করে। আজ (১৩ আগস্ট) মঙ্গলবার আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। সেখানেও ভুক্তভোগী শিল্পী রাহুল আনন্দ। সত্যিই কী ঘটেছিল বাড়িটি ঘিরে?
গত ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর আগে সকাল থেকেই ক্ষুব্ধ লাখো মানুষ পদযাত্রা করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের দিকে। বাড়িটিকে অরক্ষিত রেখে সেখান থেকে সরে যান নিরাপত্তারক্ষীরা। এতে বহু মানুষ বাড়িটির ভেতরে ঢুকে জিনিসপত্র নষ্ট করে। অনেকেই স্মৃতি হিসেবে সংগ্রহ করেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এ সময় হঠাৎ করেই জানা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে!
সংবাদমাধ্যম সূত্রে মানুষ জানতে পারে ওই সময় আগুন দেওয়া হয় শিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়িতেও। এই খবরে দুই পক্ষে ভাগ হয়ে যায় মানুষ। একদল মনে করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হওয়ায় রাহুলের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি দল মনে করে দেশ অরক্ষিত হয়ে পড়ায় সুযোগসন্ধানী স্বার্থান্বেষী একটি পক্ষ এ কাজ করেছে। ঘটনাটি দ্রুত জানাজানি হলে নিন্দার ঝড় ওঠে। কারণ রাহুল আনন্দ ও জলের গান দেশের প্রায় সব শ্রেণির মানুষের প্রিয়। দ্বিতীয়ত বাড়িটি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত। তৃতীয়ত, এই বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত