রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন, পরিবারের ক্ষোভ প্রকাশ

  মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ১৮:১৮ |  আপডেট  : ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪৫

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আবু সাঈদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়াই লাশ দাফন। পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ প্রকাশ। বুধবার সকালে নিজ বাড়িতে তিনি হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে হলে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে সম্মান জানাবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকলে তাঁর পরিবর্তে সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকবেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেহেরপুরে ড. শহীদ শামসুজ্জোহা পার্কে জোহরের নামাজের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি দল উপস্থিত থাকলেও ইউএনও কিংবা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন না। একারণে পুলিশের একটি দল স্থান ত্যাগ করেন। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রোমানা খাতুন বলেন, বুধবার সকালে তিনি হৃদরোগ আক্রন্ত হয়ে মারা যান। তাঁর সম্মাননা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। ইউএনও থাকবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। তাঁরা স্বামীর মরদেহ জোহরের নামাজের আগেই শহীদ ড. শামসুজ্জোহা পার্কে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু জোহরের নামাজ শেষ হওয়ার পরও ইউএনও আসেননি। তিনি ব্যস্ত ছিলেন, তাই রাষ্ট্রীয় সম্মান মেলেনি। তিনি বিএনপি নেতা হওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় সম্মান মেলেনি। মানুষের মৃত্যুর পরেও যারা রাজনীতি ভুলতে পারে না তাদের দিয়ে রাষ্টের নাগরিক কতটা সম্মান পাবে সেটি মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নেতা আব্দুল মালেক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুতে কীভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে, তার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশ রয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৮এর ক্ষমতাবলে প্রণয়ন করা আদেশটি হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন আদেশ ২০২০। ওই আদেশের ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারের প্রতিনিধিত্বকরণ’ শীর্ষক ধারায় (৪) বলা হয়েছে, মহানগর বা জেলা সদরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, উপজেলা এবং পৌরসভার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাঁরা ‘রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বা জনগুরুত্বপূর্ণ’ কাজে ব্যস্ত থাকলে মহানগর বা জেলা সদরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা সদরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকবেন। 

একজন বিএনপি নেতা হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদকে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়া এলাকার জনমনে ক্ষোভ স ার হলো। এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুন বলেন, এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি অপমানজনক ঘটনা। নিয়ম হচ্ছে ইউএনওকেই এ সম্মাননা প্রদান করতে হবে। বিএনপি রাজনীতি করলে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া যাবে না এটি চরম অপমানজনক। পুলিশ গার্ড অব অর্নার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো ইউএনও না আশায় তারা ফিরে যায়। পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। 

এ বিষয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রিপন জানান, মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছায় প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ে যান একারণে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়নি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত