রাণী এলিজাবেথের মৃত্যুতে শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষও শোকাহত

  টি.আই সানি, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৫৯ |  আপডেট  : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪১

বৃটেনের দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথের মৃত্যুতে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষও শোকাহত। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে রাণী মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শোকাহত হয়েছেন। তিন যুগ আগে ১৯৮৩ সনের ১৬ নভেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামে স্বনির্ভর গ্রামের চিত্র দেখতে এসেছিলেন বৃটেনের দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথ।

তাঁর আগমন উপলক্ষ্যে শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামে বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগে। শ্রীপুর থেকে বৈরাগীরচালা সড়কটি পাকা করা হয়। শ্রীপুর রেলস্টেশন প্ল্যাটফরমটি পাকা করা হয়। উপজেলা পরিষদ ও হাসপাতালের নতুন ভবন এবং অবকাঠামো নির্মিত হয়। মোট কথা রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আগমন উপলক্ষ্যে শ্রীপুরকে নতুন করে সাজানো হয়। অনেকগুলো গ্রামের মধ্যে দেশের একটি গ্রাম বিশে^ আলোচিত হয়। রাণীর আগমনেই গ্রামটি অঅলোচনায় আসে। এরপর থেকে রানীকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে রেখেছেন এ গ্রামের মানুষ।

বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষের কাছে রাণীর পরিচিতি ছিল একটু ভিন্নভাবে। রাণীর আগমন উপলক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে তৎকালীন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে বৈরাগীরচালা গ্রামটি স্বনির্ভর গ্রাম হয়ে উঠে। ওই বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে গ্রামবাসী স্বনির্ভর গ্রাম হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন এবং এখনও তা করেন। ওইসময় দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথের স্বাধীন বাংলাদেশে একমাত্র সফর। প্রেসিডেন্ট এরশাদও সে সময় সফরসঙ্গী ছিলেন। চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন।

বৈরাগীরচালা গ্রামের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ১৯৮৩ সালে গ্রামটি ছিল স্বনির্ভর গ্রাম। এলাকার মানুষের গোয়ালভর্তি গরু-ছাগল, খামার ভর্তি মোড়গ-মুরগী, পুকুরভর্তি মাছ, ফসলি জমি, শাকসব্জী-তরি-তরকারি সবকিছু ছিল। কোনো কিছুর অভাব ছিল না এ গ্রামের মানুষের মধ্যে। তারা বাইরে থেকে কিছু আমদানি করতেন না। মূলত এ দৃশ্য দেখতে বৃটেনের দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথ গ্রামটিতে আসেন। সে সময় তাঁর বাবা মিজানুর রহমান খানের বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখে স্বনির্ভর গ্রামের পরিচয় গ্রহণ করেন বৃটেনের রাণী।

গ্রামের গৃহিণী সালেহা আক্তার (৭০) বলেন, গ্রামের কাঁঠাল বাগানে বসে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে গল্প করেন রাণী। এ গ্রামের পক্ষ থেকে প্রতিকী হিসেবে রাণীর হাতে একটি রূপার চাবি তুলে দেওয়া হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে যে কোনো সময় রাণী বৈরাগীরচালা গ্রামে আসতে পারবেন। তার জন্য গ্রামের সব দরজা সর্বদা খোলা।

স্থানীয় শিক্ষক মাসুদ ইবনে মোবারক বলেন, রাণী এলিজাবেথ বৈরাগীরচালা গ্রামে এসে যে পুকুরে মাছ অবমুক্ত করেছিলেন সে পুকুরটি এখন পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে। পুকুরের পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। রাণীর আগমন উপলক্ষে বৈরাগীরচালা গ্রামে বিদ্যুৎসংযোগসহ রাস্তা পাকা করণ করা হয়। গ্রামে সেসময় প্রথমবার বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়, যার সুবাদে ওই গ্রামে এখন বেশ কয়েকটি কলকারখানা গড়ে উঠে।

গ্রামের বাসিন্দা চাঁন মিয়া (৭০) বলেন রাণীকে আমরা দেখেছি। রানীর সাথে বসে গল্প করেছি। তার কথা আমরা বুঝিনি তবে তাঁর সাথের লোকজন আমাদের বুঝিয়ে দিতেন। আমাদের ভাগ্য আমরা বৃটেনের রাণীকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি। তিনি পুকুর ঘুরে দেখন, খুঁড়েঘর দেখেছেন। তিনি পুকুরে মাছ অবমুক্ত এবং মাছ ধরা দেখেছেন। হাতে ভাজা মুড়ি বানানো, গ্রামীণ শিল্পের নানা ধরণের উপকরণ তৈরীর নমুনা দেখানো হয়। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত