রংপুরে আটশত বছরের প্রাচীন নান্দনিক শিব মন্দিরটি ধ্বংসের পথে

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ৯ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৫২ |  আপডেট  : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১১

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের ভায়ার হাটে জমিদার শিব প্রসাদ মিত্রের তৈরী শিব মন্দিরটি সংস্কার ও সংরক্ষনের আভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের পুরাকৃর্তির এ মন্দিরটি সংস্কার ও সংরক্ষনে যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে ভায়ারহাটে গিয়ে জানা গেছে, আজ থেকে প্রায় আটশ বছর পূর্বের কথা, স্বর্গীয় জমিদার শিব প্রসাদ মিত্র এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের শিব দেবতার পূঁজা করার জন্য নিজ উদ্যোগে বর্তমান ভায়ার হাট বাজারের পাশে পৌনে ৮শতক জমির উপর ৮০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট্য চুনশুরকি দিয়ে নানা কারু কার্যে খচিত অনেক টাকা ব্যয়ে নান্দনিক শিব মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। সে সময় হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পদভারে মুখরিত থাকতো মন্দিরটি। শিব প্রসাদ মিত্র ইহলোক ত্যাগ করলে তার উত্তরসূরী রাম প্রসাদ মিত্র মন্দিরের সার্বিক দেখা শুনার ভার নেন। এরপর কালী প্রসাদ মিত্র, অম্বিকা প্রসাদ মিত্র, ভবানি প্রসাদ মিত্র, হর প্রসাদ মিত্র পর্যায় ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। হর প্রসাদ মিত্রের মৃত্যুর পর দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তার দুই ছেলে অন্নদা প্রসাদ মিত্র ও সুখদা প্রসাদ মিত্র স্ব- পরিবারে ভারতে চলে যান। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে এসে দেখেন শিব মন্দিরের ভিতরে থাকা মূর্তি গুলো পাক হানাদার বাহিনী ভেঙ্গে মন্দিরে থাকা স্বর্ণালংকার সব নিয়ে গেছে। সেই থেকে আর পুজা হয় না এ মন্দিরে।

নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরা পুরাকৃর্তির এ মন্দিরটি স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও সংরক্ষন ও সংস্কার না করায় এটি ভুতুরে মন্দিরে পরিনত হয়েছে। মন্দিরের গায়ে গাছ জন্মে পাহাড় আকার ধারন করেছে। মন্দিরের দামি ইট গুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছে এলাকার মানুষ। ইতিমধ্যে মন্দিরের জমি বেদখল হয়ে গেছে। এ ব্যপারে অন্নদা প্রসাদ মিত্রের ছেলে সুবোধ কুমার মিত্র ঝানু বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ সব বলে কি হবে যে দেশে ঐতিহ্য রক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না, সেখানে আমাদের কথায় কি ফল হবে। এ বিষয়ে অনেক বলেছি, বলতে বলতে মন্দিরই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

গত ২৩ জানুয়ারী ২০১৩ সালে জেলা প্রশাসক রংপুর ফরিদ আহম্মদ ভায়ার হাট বাজারের সেড এর উদ্বোধন করতে আসলে সাংবাদিক সারওয়ার আলম মুকুল মন্দিরটি সংস্কার করে সংরক্ষনের দাবী জানালে, তিনি তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল মোতালেব সরকার কে মন্দিরের প্রকৃত ইতিহাস তৈরী করে তার দপ্তরে প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন এবং ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানানোর প্রতিশ্রুতি দেন, সেই সাথে মন্দিরর জমি নকশা অনুযায়ী বের করে সীমানা নির্ধারনের জন্য সহকারী কমিশনার (ভুমি) কে নির্দেশ দেন। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে তার আজও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। মন্দিরটি এখন চাম বাদুরের দখলে। 

বর্তমান কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিদুল হক বলেন, আমি নতুন এসেছি মন্দিরটি সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এলাকাবাসী মন্দিরটি সংরক্ষন ও সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত