যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ

  স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২২, ২০:০৪ |  আপডেট  : ৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৩

মোংলায় পারিবারিক কলহ ও যৌতুকের দাবিতে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধুকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী, শ্বাশুড়ী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। কিন্ত স্বামী মহিদুলের পরিবারের দাবী অভিমান করে গলায় ফাঁস নিয়ে তাসলিমা বেগম আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত ১০টার দিকে লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় দেবর, ননদ ও স্বামী মহিদুল। মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনয়নের গোড়াবাশতলা গ্রাম এলাকায় এঘটনা ঘটে। 

এনিয়ে মোংলা থানায় এজাহার দাখিল করেছে গৃহবধুর ভাই মফিজুল ব্যাপারী।বিয়ের পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর, দেবর ও শ্বাশুরী বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবীতে তাছলিমার উপর মারধর সহ শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তি ও থানা পুলিশের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার শালিশ বৈঠকও হয়েছে। যা ওই শালিস বৈঠকে স্বামী মহিদুল, মা শাহিদা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা ষ্টাম্পে মুছলেকা দিয়ে পুনরায় ঘরে তুলে নেয় তাছলিমাকে। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয় মহিদুল, কেন থানা পুলিশ হলো এ নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও মনোমালিন্য চলছিল বলে দাবী তাছলিমার পরিবারের। ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে তাছলিমা বেগম গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করছে বলে অপ-প্রচার চালায় স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। এছাড়া এদিন দুপুরেও তাছলিমাকে বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতন করেছে এবং অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় ডাক্তারও দেখানো হয়েছে বলে দাবী করেন তাছলিমার মেঝো ভাই মফিজুল ব্যাপারী ও স্থানীয় অনেকে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোংলা হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে যায় স্বামী, শশুর, ননদ ও দেবর। খবর পেয়ে তাছলিমার ভাইয়েরা দ্রুত ছুটে এসে তার বোনের লাশ হাসপাতালের ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখতে পায় বলে অভিযোগ করে তার পরিবারের সদস্যরা।

থানার অভিযোগ সুত্র ও স্থানীয়রা জানান, মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের গোড়াবাশতলা গ্রামের সেকেন্দার শেখের পুত্র মহিদুল শেখ (৩০)’র সাথে দীর্ঘ ১১ বছর আগে বিবাহ হয় তাসলিমা বেগম (২২) এর। তাদের সংসারে ৮ বছরের একটি ছেলে ও ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মৃত তাসলিমা বেগম একই এলাকার ১নং ওয়ার্ডের আগলাদিয়া গ্রামের আনোয়ার ব্যাপারীর মেয়ে।

তাসলিমার শ্বাশুরী শাহিদা বেগম’র দাবী, বৃহস্পতিবার দুপুরে লুডু খেলা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। কিন্ত এসময় আমি অন্য ছেলের বাড়ীতে থাকাকালীন জানতে পারি সন্ধ্যা রাতে তাছলিমা ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এমন খবর পেয়ে দ্রুত তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং হাসপাতালে বসেই তার মৃত হয়েছে বলে দাবী শ্বাশুড়ী শাহিদা বেগম’র। তবে তাছলিমাকে হাসপাতালে নেয়ার সময় ননদ ও স্বামী মহিদুল সাথে ছিলো, কিন্ত পরে কোথায় চলে গেছে তা জানা নি বলে জানায় শ্বাশুরী শাহিদা বেগম।

নিহত তাছলিমার প্রতিবেশীরা জানায়, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে তাছলিমার উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাতো স্বামী মহিদুল শেখ ও তার পরিবারের সদস্যরা। মহিদুল এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে কোন ফয়সালা করতে না পেরে থানা পুলিশের মাধ্যমে আর কোন সময় মারধর বা নির্যাতন করবে না বলে ষ্টাম্পে মুছলেকা দিয়ে তাছলিমাকে নিয়ে যায় স্বামী মহিদুল। তাছলিমা আত্মহত্যা করেনি, তাকে মারধর ও নির্যাতন করে মেরে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে গৃহবধু তাছলিমা হত্যার বিচারের দাবিতে থানায় মামলা দায়েরের জন্য এজাহার দাখিল করা হয়েছে।

মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র মেডিকেল অফিসার ডাঃ এস এম ফয়সাল ইসলাম স্বর্ণ বলেন, গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে তাছলিমাকে মৃত্যু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে স্বামী মহিদুল শেখ, ননদ ও শ্বাশুড়ী শাহিদা বেগম। কিন্ত শ্বাশুড়ীকে লাশের কাছে পেলেও স্বামী ও ননদকে পাওয়া যায়নি।

মোংলা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন ইউনিয়ন থেকে এক গৃহবধুর লাশ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে মরদেহ বাগেরহাট সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এব্যাপারে গৃহবধুর ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে, ময়না তদন্তের পর জানা যাবে এটি হত্যা নাকি আত্যহত্যা, ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হলে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে জানায় থানার এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত