যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে, দাবি প্রতিমন্ত্রীর
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৫৮ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৭
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। নির্বাচন, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০ই ডিসেম্বরকে টার্গেট করে বাংলাদেশের ওপর নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কোনো সম্ভাবনা যে নেই, সেটি আমি আমার আগের (প্রায় দু’সপ্তাহে আগে) ব্রিফিংয়ে যুক্তি দিয়ে বলেছিলাম। আবারো সেটি পুনর্ব্যক্ত করছি। ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর র্যাবের ৭ জন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেই থেকে এ নিয়ে আলোচনা শুরু। আমরা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে এনগেজ করেছি। র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ উঠলে সরকার যে প্রক্রিয়াগুলো ফলো করতো তা নিষেধাজ্ঞা আসার আগে প্রকাশ করা হতো না। নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে তা শেয়ার করা হয় এবং সেই প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়েছে। দু’বছর ধরে অপরাধ দমনে বহু র্যাব সদস্য হতাহত হয়েছেন। অপরাধীরাও মারা গেছে।
কিন্তু এটা সত্য যে আমরা প্রতিটি ঘটনা বিস্তৃত তদন্ত করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তা যুক্তরাষ্ট্রসহ উদ্বিগ্ন সবাইকে ডিটেইলে শেয়ার করেছি। এমনকি সাংবাদিকদের কাছেও তা সময় সময় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, যারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। সবমিলে র্যাব তার স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তদন্ত, ব্যবস্থা নেয়া এবং তা স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করার মতো একটি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ইনসিস্ট বা অনুরোধ করছিলো। আমরা তাদের চাওয়া মতো তা-ই করেছি। অনেক ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে। এজন্য আমরা খুব দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দূরে থাক, র্যাবের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাই উঠে যাবে। পরক্ষণেই প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র (সরকারের নির্বাহী আদেশে) নিষেধাজ্ঞা না উঠালেও বাংলাদেশ যে আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে সেখানে যেভাবে যুক্তি, তথ্য নিয়ে উচ্চকণ্ঠ তাতে আইনি প্রক্রিয়াতেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে- বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট এবং তাদের ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইনের ওপর ভিত্তি করে হাইপথিটিক্যাল কিছু সিচুয়েশনকে সামনে নিয়ে এসে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারির হাইপ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা বরাবরই বলেছি এটারও কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ আমরা মনে করি পারস্পরিক নির্ভরশীলতার জায়গায় এমনটি করা যায় না। ব্যবসা কারও দয়া বা দাক্ষিণ্যের বিষয় নয় মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়া ইউরোপের বাজারে জিএসপি ফ্যাসিলিটি বিদ্যমান থাকার বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়ায় অনেক সহায়তা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পায় না। আগেও যখন পেতো তা খুব সিগনিফিক্যান্ট জায়গায় ছিল না।
শ্রমখাতের উন্নয়নে ইউরোপ-আমেরিকার যে চাওয়া ছিল তা পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফলে ইউরোপ থেকে নিষেধাজ্ঞার ছিটেফোঁটাও আসার আশঙ্কা নেই। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন ইলেকশন মুডে আছি। সামনে নতুন সরকার গঠিত হবে। আমরা সেই মুমেনটাম ধরে রাখার চেষ্টা করবো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গ্যাপ বা ভুল বোঝাবুঝির অবসানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা আমাদের অনেকবার বলেছিলেন মার্কিনিরা এত ঘন ঘন আসে কেন? তাদের এত হাই প্রোফাইল ভিজিটের কারণ কি? ইস্যু বেড়েছে, গুরুত্ব বেড়েছে এসব বিবেচনায় তারা বাংলাদেশে এসেছেন। এটা কখনো একপক্ষীয় ছিল না। তবে হ্যাঁ, কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে ভবিষ্যৎ বলে দিবে এখানে কিছু অবসান হওয়ার বাকি রয়েছে কিনা? তাদের যেসব বিষয়ে উদ্বেগ ছিল তার অনেক কিছুই আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আমরা খোলাখুলিভাবে তাদের অনেক কিছু বুঝিয়েছি এবং আমার বিশ্বাস তারা বুঝেছেনও।
অতীতে এভাবে শেয়ার করা হয়নি দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ কারণে কিছু মিস কনসেপশন তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যাদের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড হয়েছিলেন, আমরা সেটি ধরতে পেরেছি এবং তাদের কারেক্ট করতে পেরেছি। আমার বিশ্বাস তারা তাদের অবস্থানটা বুঝতে পেরেছেন। নির্বাচনে কে এলো না এলো তা দেখার সুযোগ নেই। নতুন সংকল্প নিয়ে নতুন সরকার আসছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নতুন অঙ্গীকার নিয়ে আরও এগিয়ে যাবে।
ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত