যার প্রভাব রয়ে যাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২৩, ১৪:৪৪ |  আপডেট  : ১ মে ২০২৪, ০৬:৪৫

রাহুর মত মৃত্যু
শুধু ফেলে ছায়া
পারেনা করিতে গ্রাস জীবনের স্বর্গীয় অমৃত
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,শেষ লেখা)

পৃথিবীতে মানুষ জন্মগ্রহণ করে আবার পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু কয়জনের জীবন সার্থক হয়! কয়জনই বা নিজেকে চিনতে পারে! বিভিন্ন মানুষের কাছে সার্থকতা বিভিন্ন রকম হতে পারে। কিন্তু জীবনের সন্তুষ্টি ও সার্থকতা খুঁজতে খুঁজতে অন্তিম সময় পৌঁছে যায় কিন্তু ব্যর্থ হয়। খুব কম মানুষই আছেন যারা জীবনে সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। এই সার্থক মানুষগুলোর অনেকে সেই ছাপ আজীবনের জন্য রেখে গেছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম সার্থকতার পথ দেখিয়ে দিবে, তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ একজন। তাঁর সৃষ্টির কোন এক লাইনে হয়তো লুকিয়ে আছে আপনার সার্থকতা, অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে অন্য কারো সার্থকতা। সেটা নির্ভর করে মানুষের জীবন দর্শনের উপর। হয়তো কোন এক লাইনে পাওয়া যাবে বেঁচে থাকার অর্থ, কোথাও জীবনের প্রেরণা হয়তোবা কোথাও ঈশ্বর। ঈশ্বর দূরে নয়, আছে মানবের গহীনে। সেই গহীন অরণ্যের ঈশ্বর খুঁজে পাওয়াই হয়তো সার্থকতা। 

বিভিন্ন রাষ্ট্র পরিভ্রমণ করে মানবজাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির হীনতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের নিজের মত সুদৃঢ় হয়। 

শেষ লেখা হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্ত্তৃক রচিত একটি বাংলা কাব্যগ্রন্থ। এটি ১৯৪১ খ্রীস্টাব্দে তাঁর মৃৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। ১৯৩২ সালের মে মাসে তিনি ইরাকের একটি বেদুইন শিবিরে গিয়েছিলেন। সেখানে এক উপজাতীয় নেতা তাকে বলেন, "আমাদের মহানবী বলেছেন, তিনিই সত্যকারের মুসলমান, যাঁর বাক্য বা কর্মের দ্বারা তাঁর ভ্রাতৃপ্রতিম মানুষগুলির ন্যূনতম ক্ষতিসাধনও হয় না।" কবি তার ডায়েরিতে লিখেছেন, "চমকে উঠলুম। বুঝলুম তার কথাগুলিই মানবতার মূল কথা।"

জীবনের শেষ দশ বছরে রবীন্দ্রনাথ পনেরোটি বই লিখেছিলেন। পুনশ্চ, শেষ সপ্তক ও পত্রপুট নামে গদ্যকবিতা-সংকলনগুলি এই সময়েই প্রকাশিত হয়। জীবনের এই পর্বে রবীন্দ্রনাথ গদ্যগীতিকা ও নৃত্যনাট্য নিয়ে নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা ও চণ্ডালিকা নামে প্রসিদ্ধ নৃত্যনাট্যত্রয়ীও এই সময়ই লিখিত হয়। এছাড়া তিনি দুই বোন, মালঞ্চ ও চার অধ্যায় নামে তিনটি উপন্যাসও রচনা করেন। জীবনের শেষ পর্বে কবি বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়। এই গ্রন্থে তিনি জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা তথ্যমূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। তার এই সময়কার কবিতাগুলিতেও বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলির উপর আধারিত প্রকৃতিবাদের সুর ধ্বনিত হয়। সে, তিনসঙ্গী ও গল্পসল্প গল্পগ্রন্থগুলিতেও বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী চরিত্রের নানা সমাবেশ লক্ষিত হয়।

১৯৪০ সালের শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এবার আর সেরে ওঠেননি। এই সময়কালের মধ্যেই জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু কবিতা রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ। এই কবিতাগুলির মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে লেখা রবীন্দ্রনাথের কিছু অবিস্মরণীয় পঙক্তিমালা।

আজ ২২শে শ্রাবণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস। বাংলা ১৩৪৮ সালের (১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই) এই দিনে মহাকালের পথে যাত্রা করেন তিনি কলকাতার জোড়াসাঁকোয় অবস্থিত বাসভবনের প্রয়াত হন রবীন্দ্রনাথ। উল্লেখ্য, জোড়াসাঁকোর এই বাড়িতেই কবির জন্ম ও বেড়ে ওঠা। 

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত