যান্ত্রিক যুগে কাউনিয়ায় কদর নেই গরুর গাড়ির

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪২ |  আপডেট  : ৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৩

ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে, অথবা ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে, রংপুর অ লে এসব ভাওয়াইয়া গানের সৃষ্টি হয়েছে গরুর গাড়িকে ঘিরে। গরুর গাড়ি আর গাড়িয়ালকে নিয়ে বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিনের ভাওয়াইয়া দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্থান করে নিয়েছিল। এক সময় ছিল যখন গরুর গাড়ি ছাড়া বিকল্প বাহনের কথা ভাবাই যেত না। বিবাহ অনুষ্ঠান, মেলা এবং ভ্রমণের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। গাড়িতে ছাউনি সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি, বাবার বাড়ি আসা-যাওয়া করত নববধূরা। বিবাহ অনুষ্ঠানে অনেক সাজানো গাড়ির বহর নিয়ে বরপ¶, কনের বাড়িতে যেত। যেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই গরুর গাড়িও নেই। নেই গাড়িয়ালের কণ্ঠে ভাওয়াইয়া গানও। যান্ত্রিকতার কাছে হারিয়ে গেছে পরিবেশবান্ধব এসব গরুর গাড়ি। এখন সারা দিন চেয়ে থাকলেও গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না। চালক না থাকায়, গাড়িয়াল ভাইয়ের অমৃত কন্ঠের ভাওয়াইয়া গানও শোনা যায় না, সাথে হারিয়ে গেছে কারিগররা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে যানবাহন। 

এক সময় কাউনিয়ায় সর্বত্রই গরুর গাড়ির কদর ছিল। জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল গরুর গাড়ি। বর্তমানে ঘোড়ার গাড়িও বিলীনের পথে। এর পর রংপুরের কাউনিয়া হঠাৎ দেখা মিলল একটি গরুর গাড়ী। সকল কে তাক লাগিয়ে দেয়ার মত সাদা ধব-ধবে দুইটি গরু, একটি গরুর গাড়ী আর আধূনিক মডেলের এক কম বয়সী গারোয়ান দৃষ্টি কাড়লো সকলের। উপজেলা সদর থানা রোডে দীর্ঘ দিন পর হঠাৎ দেখা মেলে একটি গরুর গাড়ীর। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া গরুর গাড়ী উপজেলায় প্রধান সড়কে দেখা মেলায় পথচারী থেকে শুরু করে দোনাকদার ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা গরুর গাড়ী দেখার জন্য ভীর জমায়। বিলুপ্ত প্রায় গরুর গাড়ীটি এসেছে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত রাজপুর ইউনিয়ন থেকে। গাড়ীর গারোয়ান সফিকুল ইসলাম জানান তাদের বাড়ী তিন পাশেই তিস্তা নদী। তাই অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পারায় গত কয়েক মাস আগে ২ লাখ ৬ হাজার টাকা দিয়ে ২টি সাদা রংয়ের গরু ক্রয় করেন। তারপর  গরুর গাড়ী তৈরী করতে খরচ হয় আরও ৪০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে সখের গরুর গাড়ী বানান তার বাবা আশেক আলী। প্রতি দিন আয় কেমন হয় সে বিষয়ে জানতে চাইলে সফিকুল ইসলাম জানা এখন তেমন আয় নেই, তবে আলুর মৌসুমে ভালই আয় হয়। গাড়ী দর্শক এক কলেজ পড়–য়া ছাত্র ফরহাদ জানায় তার বয়স ১৮ হলেও আজ প্রথম গরুর গাড়ী দেখছেন। উৎসুক জনতা বলছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সত্যিই মন কাড়া।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত