মৎস্য ভান্ডার কাউনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৪১ প্রজাতির দেশী মাছ

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৬:১৭ |  আপডেট  : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:৫০

গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ এ তিনে মিলে গ্রাম বাংলার মানুষের জীবন যাত্রা প্রান সঞ্চালন ঘটলেও দিন দিন অনেক কিছু কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। মৎস্য বিভাগের উদাসিনতায় রংপুরের মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত কাউনিয়া উপজেলায় মিঠা পানির দেশীয় মাছ মিলছেনা। হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৪১ প্রজাতির দেশী সুস্বাদু মাছ।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানাগেছে, মৎস্য বিভাগের উদাসিনতা, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট ও রিং জালের অবাধ ব্যবহার, অপরিমিত কিটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাধঁ নির্মাণ, খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা জলাশয় ভরাট, মা মাছের আবাস স্থলের অভাব, মা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই ধরে ফেলা, নদী নালায় বানা দিয়ে মাছ ধরা, বিদেশী আগ্রাসী রাক্ষুসে মাছের চাষ ও প্রজননে ব্যঘাত ঘটার কারণে কাউনিয়ায় প্রায় ৪১ প্রজাতির দেশী মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। নদী নালা খাল বিলে মৌসুমের শুরুতে গত বছর যে পরিমান মাছ পাওয়া গেছে চলতি মৌসুমে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় আমদানী কম থাকায় মাছের দাম আকাশচুম্বি। অনেকে বলছেন বৃষ্টি হলেই মাছ বাজারে আসতে শুরু করবে কিন্তু চলতি মৌসুমে আশানুরুপ বৃষ্টি এখনও হয়নি। অনেকে বলেছেন সরকারী মৎস্য বিভাগের নজদারী না থাকায় এবং মৎস্য বিভাগের উদাসিনতায় প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে মাছ উৎপাদন না হওয়ায় হাটবাজে দেশী মাছ উঠছে না। জলাশয় গুলোতে এক সময় শিং, মাগুর, কই, টেংরা, শোল, শাল, বোয়াল, আইর, গড়াই, বালিয়া, চোপরা, ভেদা, কর্তি, গতা, বাইম, পুটি, ডারকা, মোলা, ঢেলা, গতা, পয়া, খলিশা, ধুতরা, চান্দা, চিংরি, ঘারুয়া, ফলি, বউপুটি, কালবাউশ, সোনামুখি, বৈরাতী ইত্যাদি নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে এ জাতীয় মাছ আর চোখে পরে না। হাট বাজার গুলোতে দেশীয় মাছের আমদানি একেবারেই নেই বললেই চলে। হরিচনলস্কর গ্রামের নুর আমিন জানান এক সময় তিস্তা ও মানাস নদীতে অনেক ধরনের দেশী মাছ পাওয়া যেত এখন আর তেমন মাছ হয় না। নিজপাড়া গ্রামের প্রভাষক আসাদুজ্জামান শামিম জানান গত ১০ বছর আগেও গ্রামের মানুষ তিস্তা নদীর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের ছোট মাছের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ শুকিয়ে সংরক্ষণ করতো আবার কেউ সিদল তৈরী করতো। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে এসব আর ভাবই যায় না। কাউনিয়ায় মাছ ব্যবসায়ী ভোলরাম দাস জানান প্রাকৃতিক মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া এবং ছোট মাছ সংরক্ষণে সরকারী বা ব্যাক্তিগত তেমন কোন উদ্যোগ না থাকায় দেশী মাছ কমে যাচ্ছে। দেশী মাস সংরক্ষনে কাউনিয়া মৎস্য বিভাগের কোন উদ্যোগ নেই। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার জানান উপজেলায় ৫৫০৮ মেঃটন চাহিদার বিপরিতে উৎপাদন হয় ৪৪৭৭মেঃটন, ঘাটতি ১০৩ মেঃটন মাছ। চলতি বছর মাছ সরকারী বিভিন্ন জলাশয়ে অবমুক্ত করা হবে। আমরা চেষ্টা করছি দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে। জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ, ডিম ওয়ালা মা মাছ নিধন, দেশী মাছ রক্ষার বে-সরকারী কোন উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন দেশী মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকে মন্তব্য করে বলেছেন বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কিছু দিন দেশী মাছ ধরা বন্ধ রাখলে দেশী মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। 

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত