মিরকাদিমে দখল আর দূষণে বিলুপ্তির পথে ইছামতি খাল, উচ্ছেদ অভিযানের দাবী এলাকাবাসীর
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১৯:২২ | আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৩২
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি খালটি দখল আর দূষনে বিলুপ্তির উপক্রম হয়েছে। অথচ এবক সময় এই ইছামতি খালটি দিয়ে চলাচল করতো বড় বড় নৌকা, যাত্রীবাহি ট্রলার, লঞ্চ ও মালবাহী জাহাজ। যা এখন অতীত স্মৃতি হয়ে দাড়িয়েছে। এমনকি মিরকাদিম পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লার মানুষ গোসলসহ গৃহস্থলী কাজেও এই খালের পানি গুরুত্ববহন করতো। কালের বির্বতণে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ও দখল উৎসবে মেতে ওঠে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ইছামতি খালটির বিভিন্ন স্থানে প্রথমে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় বানিয়ে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি খালটিকে সরু করে ফেলে দখলদার চক্রটি। ফলে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সুযোগে ঐতিহ্যবাহি ইছামতি খালটি তার নিজস্ব রূপ হারিয়ে ফেলে। সচ্ছ ও টলটলে পানি বিষাক্ত কালো রঙে রূপ ধারণ করায় গোসলসহ মানুষের গৃহস্থলী কাজও বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় কতিপয় প্রভাবশালী দখলদার চক্র ময়লার ভাগাড় বানিয়ে ভরাট করা স্থানে দোকানঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ইছামতি খালটিকে গ্রাস করতে থাকে। বছরের পর বছর ধরে দখল উৎসবের কারনে ঐতিহ্যবাহি ইছামতি খালটি এখন বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন দখল উৎসব বন্ধ থাকলেও বর্তমানে খালটির একাধিক স্থান ভরাট করে স্থাপনা নির্মান করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে উঠেছে পৌর বিএনপি নেতাসহ প্রভাবশালী দখলদার চক্র। খালের দুপাশে গড়ে ওঠা বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা ময়লা ও বর্জ্য ফেলে বর্তমানে খালটির পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এলাকার পরিবেশ দূষণসহ দুর্গন্ধে পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লাবাসী পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
সরেজমিন মিরকাদিম পৌরসভার সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মিরকাদিম পৌরসভার অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা বাজার ও বিভিন্ন কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য এবং বাজারের সকল ময়লা-আর্বজনা ফেলে প্রথমে খালের একাধিক স্থানে ময়লার ভাগাড় বানিয়ে ভরাট করে সরু করে ফেলে এবং দ্বিতীয় ধাপে ভরাট করা স্থান দখলে নিয়ে দোকানঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ইছামতি খালটিকে গ্রাস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে উঠেছে দখলদার চক্র। বর্তমানে খালটির এক তৃতীয়াংশই প্রভাবশালী দখলদার চক্রটি ভরাট করে সেখানে টং দোকান স্থাপনসহ ও স্থাপনা নির্মান করছে। একই সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে খাল দিয়ে বাজারের পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে র্দুগন্ধ ছড়িয়ে এলাকার পরিবেশ দূষনের কবলে পড়েছে। এ অবস্থায় র্দুগন্ধ মাড়িয়ে মিরকাদিম পৌর বাজার সংলগ্ন কাঠের পুল দিয়ে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের বিষয়টি নজরে আসেনি। এমনকি পৌর কর্তৃপক্ষ নিরব ভুমিকা পালন করছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্ধা দুদু মিয়া বলেন, এক যুগের বেশী সময় ধরে পানি না থাকাসহ নানা প্রতিবন্ধতায় খাল দিয়ে সকল নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বর্ষার সময় পানি থাকলেও বছরের বেশীর ভাগ সময় পানি থাকে না। খালের একাধিক স্থান ময়লা-আর্বজনার ভাগাড়ে পরিনত হওয়ায় পানি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। খালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা ভাগাড় থাকায় মারাত্ব্ক দূর্গন্ধে কমলাঘাট বন্দরে যাতায়াতের জন্য খালের উপরে নির্মিত কাঠের পুল দিয়ে চলাচল করা দরূহ হয়ে উঠেছে। বারবার দাবী করেও দীর্ঘদিনেও এর সমাধান পায়নি পৌরবাসী।
পৌরবাসৗ জানান, মিরকাদিম পৌরসভার সাবেক মেয়র শহীদুল ইসলাম শাহিন মেয়র থাকা অবস্থায় কয়েক দফা খালটি দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে দখলমুক্ত করেছিল। বর্তমানে শহীদুল ইসলাম শাহিন মেয়রের দায়িত্বে না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দখলদার চক্রটি আবারও পুরোনো কৌলশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে খালটি ভরাটের পর দখল করে নিচ্ছে এবং এখনও দখলের পায়তারায় লিপ্ত।
স্থানীয় বাসিন্ধা বৃদ্ধ শরিফুল ইসলাম বলেন, ইছামতি খালে এক সময় সাঁতরিয়ে গোসল করতাম, পানি ছিল স্বচ্ছ টলমলে। আর এখন এই খালটি দূষণ আর দখলের কারনে পানি নেই বললেই চলে। এই খালটি দখল মুক্ত করে তার পুরোনো চেহারায় ফিরিয়ে আনার দাবী এই বৃদ্ধার।
হাসান ভূইয়া নামে অপর বাসিন্দা বলেন, খালের উপর দিয়ে চলাচলের জন্য ৩টি কাঠের পুল এবং ৩টি পাকা (কংক্রিটের) সেতুও রয়েছে। কিন্তু খালটির পাশ দিয়ে যাওয়া যায় না র্দূগন্ধে। খালটি দখলের কারনে পানি প্রবাহ বন্ধ। পরিনত হয়েছে ময়লা-আর্বজনার ভাগাড়ে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক জালাল উদ্দিন বলেন, আমরাও চাই খালটি দখল মুক্ত হোক। তবে খালটি দখল মুক্ত করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেদিকে খেয়াল রাখার আহবান জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে মিরকাদিম পৌর মেয়র আব্দুস সালাম জানান, রিকাবীবাজার দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি খালটি দখল করে স্থাপনা নির্মান এবং বাজারের ময়লা খালে ফেলে ভরাট করে খাল দখলের বিষয়টি শুনেছি । একটি দখলদার সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত। শিগগিরই সরেজমিন খালের দখলস্থান পরিদর্শন করে দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, রিকাবীবাজারে খালটি দখল মুক্ত করতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া মিরকাদিম পৌরসভার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দখলকারীদের তালিকা তৈরী করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবেও জানান প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত