ভোজ্যতেলের ৮৮ শতাংশ আমদানি করেছে চার কোম্পানি

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ৬ মে ২০২২, ১৯:০৪ |  আপডেট  : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৫৭

শিল্প সুবিধায় ২০২১ সালে বিশ্ববাজার থেকে ১৮ লাখ ১৮ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এ তেল আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। শুল্ক কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিল্প খাতে আমদানি করা ভোজ্যতেলের ৮৮ শতাংশই হয়েছে টিকে, মেঘনা, সিটি ও এস আলম—এ চার কোম্পানির অধীনে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের [এনবিআর] তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২১ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল (শিল্প খাতে) সুবিধায় আমদানি হওয়া ১৮ লাখ ১৮ হাজার টন [পরিশোধিত ও অপরিশোধিত] ভোজ্যতেলের শুল্কায়ন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, যার মূল্য ১৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। শুল্কায়ন বিবেচনায় টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের অধীনে আমদানি হয়েছে ভোজ্যতেলের ৮৮ শতাংশ। শিল্প খাতে আমদানির কারণে এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান প্রথমেই কর পরিশোধ না করে বরং ট্যাংকে রাখা তেল খালাসের সময় ধাপে ধাপে পরিশোধের সুযোগ পায়।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুবিধা নিয়ে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৩৬৩ টন শুল্কায়ন করে ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে টিকে গ্রুপের মাধ্যমে, যা মোট আমদানির ৩০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। স্থানীয় বাজারে পুষ্টি ব্র্যান্ড নামে ভোজ্যতেল সরবরাহ করছে চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১ সালে টিকে গ্রুপের আমদানীকৃত তেলের শুল্কায়ন হয়েছে ৫ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।

২০২১ সালে মেঘনা গ্রুপের আমদানীকৃত ভোজ্যতেল শুল্কায়ন হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯২ টন, যা মোট আমদানির ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ। ফ্রেশ ব্র্যান্ডের মোড়কে ভোজ্যতেল সরবরাহ করছে মেঘনা গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির আমদানি হওয়া তেলের শুল্কায়ন মূল্য ৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা।

শিল্প সুবিধায় শুল্কায়ন হওয়া সিটি গ্রুপের আমদানীকৃত ভোজ্যতেলের পরিমাণ ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৫২০ টন, যা মোট আমদানির ১৯ দশমিক ১২ শতাংশ। দেশের বাজারে তীর ও সান ব্র্যান্ডের মোড়কে ভোজ্যতেল সরবরাহ করছে সিটি গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির আমদানি করা তেলের শুল্কায়ন মূল্য ২০২১ সালে ছিল ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, ২০১৫-১৬ সালের আগে ভোজ্যতেল সবচেয়ে বেশি আমদানি করত নূরজাহান গ্রুপ। সেই কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেশে একসময় তেলসংশ্লিষ্ট কোম্পানি ছিল ৭৫টি। ব্যবসায় লোকসান দিতে দিতে এখন অনেক কোম্পানিই নেই। এখন বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে মূলত সাতটি কোম্পানি। এগুলোও যদি দেউলিয়া হতে শুরু করে, তবে একটা সময়ে তেল আমদানির কোনো কোম্পানিই থাকবে না।

কোম্পানির দেউলিয়াত্ব ঠেকাতেই তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন সরকার তদারক করছে উল্লেখ করে বিশ্বজিত সাহা আরো বলেন, ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ট্যারিফ কমিশনের সহায়তায় নিয়ন্ত্রণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সহায়তা করে। সবার সমন্বিত মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে এ বাজার নজরদারি করে সরকার। ফলে কোম্পানি নয়, বরং বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশন।

জানা গিয়েছে, পাম ও সয়াবিন তেল পরিশোধিত ও অপরিশোধিত আকারে আমদানি হয়। অপরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা সয়াবিন তেল স্থানীয়ভাবে পরিশোধনের পর বাজারজাত করা হয়। তবে দেশের বাজারে ব্যবহার ও আমদানি বেশি হয় প্রধানত পরিশোধিত পাম অয়েল। আমদানি তথ্য বলছে, ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি শুল্কায়ন হয়েছে ১২ লাখ ১৬ হাজার টন পরিশোধিত (রিফাইন্ড) পাম অয়েল। এর পরই রয়েছে অপরিশোধিত [ক্রুড] সয়াবিন ৬ লাখ ৩ হাজার টন। আমদানি হওয়া পাম অয়েলের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া—এ দুই দেশের ওপর নির্ভরতা রয়েছে দেশের ব্যবসায়ীদের। তবে সয়াবিন আসছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে।

২০২১ সালে এস আলম গ্রুপের আমদানীকৃত ভোজ্যতেল শুল্কায়ন হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৮৪৮ টন, যা মোট আমদানির ১৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এস আলম গ্রুপের আমদানি করা তেলের শুল্কায়ন মূল্য ২০২১ সালে ছিল ২ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা।

টিকে, মেঘনা, সিটি ও এস আলম—চারটি গ্রুপ ছাড়াও ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (বিইওএল), বসুন্ধরা, গ্লোব, সেনা এডিবল অয়েল, মজুমদার গ্রুপসহ আরো বেশকিছু কোম্পানি।

দেশের বাজারে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেল সরবরাহ করছে বিইওএল। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ছয় বছর আগে মোংলায় অবস্থিত সিঙ্গাপুরের সুন সিং গ্রুপের ভোজ্যতেল পরিশোধনাগার কিনে নিয়ে নিজের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। গত এক বছরে বাংলাদেশ এডিবলের ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৩০ টন অপরিশোধিত সয়াবিন শুল্কায়ন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, যার মূল্য ১ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি কোনো পাম অয়েল আমদানি করে না। এর বাইরে স্বল্প পরিসরে ইউনাইটেড এডিবল অয়েলস লিমিটেডের আমদানীকৃত অপরিশোধিত সয়াবিন তেল শুল্কায়ন হয়েছে ২৭ হাজার টন, যার মূল্য ২৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে সম্প্রতি নতুন করে যুক্ত হয়েছে রূপসা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড। মোংলায় স্থাপিত হওয়া প্রতিষ্ঠানটি গত বছর প্রথমবারের মতো শিল্প সুবিধায় ১৭ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি করেছে, যার শুল্কায়ন মূল্য ১৫৬ কোটি টাকা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত