ভারতীয় অভিনেতা অশোক কুমারের জন্মদিবস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫৩ |  আপডেট  : ১৮ মে ২০২৪, ০১:১০

অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায় (জন্ম: ১৩ অক্টোবর, ১৯১১ - মৃত্যু: ১০ ডিসেম্বর, ২০০১) বিহার প্রদেশের ভাগলপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ছিলেন। জন্মকালীন তিনি কুমুদলাল গঙ্গোপাধ্যায় নামে পরিচিত ছিলেন ও নিজ বাড়িতে মজা করে তাকে দাদামণি নামে ডাকা হতো। ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে অশোক কুমার নিজেকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন। তরুণ বয়স থেকেই চলচ্চিত্র জীবনে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখতেন।

১৯৮৮ সালে ভারত সরকার কর্তৃক চলচ্চিত্র কলা-কুশলীদের জন্য প্রণীত সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা হিসেবে বিবেচিত দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও, ১৯৯৯ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রাখায় পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন তিনি। তাকে ভারতের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনেতাদের একজনরূপে গণ্য করা হয়ে থাকে। শীর্ষ কিংবা খলনায়ক বা চরিত্রধর্মী অভিনয়ের সর্বত্রই সমানভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সচেষ্ট ছিলেন।

বোম্বে টকিজে জ্যেষ্ঠ পদে কর্মরত ভগ্নিপতি শশধর মুখোপাধ্যায়ের কাছে ১৯৩০-এর দশকে বোম্বে চলে যান। ঐ সময়ের অন্যতম বৃহৎ চলচ্চিত্র স্টুডিও বোম্বে টকিজের ল্যাবরেটরি সহকারীরূপে কাজ করেন।

দৈবক্রমে অভিনয় জীবনের সূত্রপাত ঘটে তার। ১৯৩৬ সালে জীবন নাইয়া চলচ্চিত্রে শীর্ষ অভিনেতা নাজমুল হাসান অভিনেত্রী দেবিকা রাণী'র সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে ভবিষ্যতের স্বামী ও স্টুডিও প্রধান হিমাংসু রায়ের কাছে অভিযোগ করেন। এরফলে হাসানকে চলচ্চিত্র থেকে বাদ দিয়ে পরিচালক ফ্রাঞ্জ অস্তেনের আপত্তি স্বত্ত্বেও তাকে স্থলাভিষিক্ত করেন। গাঙ্গুলী তার চলচ্চিত্র নাম অশোক কুমার রাখেন যা ঐ সময়ের প্রচলিত ধারা অনুযায়ী প্রকৃত নাম ঊহ্য রাখা হতো।

একই বছর দেবিকা রাণীর সাথে অচ্যুত কন্যা শিরোনামীয় চলচ্চিত্রে অংশ নেন। ঐ চলচ্চিত্রটি হিন্দি চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার অন্যতম ছিল। এতে এক ব্রাহ্মণ বালকের অস্পৃশ্যা বালিকার মধ্যকার গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক তুলে ধরা হয় যা ভারতীয় সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধাচার ছিল। এ চলচ্চিত্রে সাফল্যের প্রেক্ষিতে ঐ যুগের জনপ্রিয় জুটিতে পরিণত হন ও নিজেদেরকে পাকাপোক্ত আসনে নিয়ে যান। ১৯৪১ সালে তারা সর্বশেষবারের মতো অঞ্জন চলচ্চিত্রে হাজির হন। কিন্তু সাফল্য না আসায় কিংবদন্তিতুল্য এ জুটির সমাপ্তি ঘটে।

এরপর বয়সের দিক থেকে বড় লীলা চিৎনিসের সাধে জুটি গড়ে সফলতা পান। কঙ্গণ, বন্ধন ও আজাদ চলচ্চিত্রে স্বতঃস্ফূর্ত সাফল্য আসায় অশোক কুমার জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন স্ব-মহিমায়। ১৯৪১ সালে চিৎনিসের বিপরীতে মুক্তিপ্রাপ্ত জুলা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সর্বাপেক্ষা অর্থ সম্পদের মালিক হন তিনি।

জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কিসমত চলচ্চিত্রে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন ও প্রথম খলনায়ক হিসেবে ১ কোটি রূপী আয়ের মাধ্যমে বক্স অফিসের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেন তিনি। এরফলে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রথম সুপারস্টারের মর্যাদা পান। অশোকের জনপ্রিয়তায় রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হতো ও সমর্থকদের সামাল দিতে পুলিশকে লাঠিপেটা করতে হয়।

বোম্বে টকিজের শেষদিকে ১৯৪৮ সালে জিদ্দিতে দেব আনন্দ ও প্রাণ, ১৯৪৭ সালে নীলকমলে রাজ কাপুরের অভিষেক এবং ১৯৪৯ সালে মধুবালার সাথে অভিনয় করেছেন তিনি।

১৯৫০-এর দশকে মিনা কুমারী ও নলিনী জয়ন্তের সাথে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে, নলিনীর সাথে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গুজব আকারে ছড়ানো হয়েছিল। ধূমপানরত অবস্থায় অপরাধী কিংবা পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে ১৯৫০-এর দশকের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তাকে দেখা যায় যা তৎকালীন ভারতীয় চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল।

১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে স্বল্পসংখ্যক চলচ্চিত্রে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে অংশগ্রহণ করতেন তিনি। তন্মধ্যে প্রথম ভারতীয় সোপ অপেরা হাম লোগে অংশগ্রহণ করতেন। অবিস্মরণীয় বাহাদুর শাহ জাফর ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অবতীর্ণ হন। ১৯৮০-এর দশকে টেলিভিশনে তার অংশগ্রহণের বিষয়ে অদ্যাবধি আলাপ-আলোচনা হয়ে থাকে।

১৯৯৭ তিনি সর্বশেষ চলচ্চিত্র আঁখো মে তুম হোতে অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্র অঙ্কন করতেন তিনি। এছাড়াও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকর্মে সম্পৃক্ত ছিলেন। সর্বমোট ২৭৫-এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ঢাকুরিয়ায় তিনি ৩০-এর অধিক নাটকেও অভিনয় করেন।

১০ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে ৯০ বছর বয়সে দেহাবসান ঘটে তার। মুম্বইয়ের চেম্বার এলাকায় অবস্থিত নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তার মৃত্যুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী গভীর শোকপ্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, তিনি অনেক প্রজন্মের অভিনেতাদেরকে অণুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।[৪]

হিন্দি চলচ্চিত্রাঙ্গণে স্বভাবসুলভ অভিনয় করে পথিকৃৎ হয়ে রয়েছেন অশোক কুমার। প্রথম মহাতারকা হিসেবে খলনায়ক চরিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। ভারতীয় চলচ্চিত্রে বেশকিছুসংখ্যক তারকা ব্যক্তিত্বের প্রতিষ্ঠা লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বোম্বে টকিজের পরিচালক হিসেবে ১৯৪৮ সালে দেব আনন্দকে প্রথমবারের মতো জিদ্দি চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ করান। এছাড়াও, দেশ বিভাজনের পর ভারতে চলে আসা অভিনেতা প্রাণকে ঐ সময়ের সফলতম খলনায়ক হিসেবে পুনর্বাসন ঘটান।

১৯৫৯ সালে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬২ সালে রাখী চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা মনোনীত হন। ১৯৬৩ ও ১৯৬৯ সালে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার সেরা হিন্দি অভিনেতা পুরস্কার পান যথাক্রমে গুমরাহ ও আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের জন্য। ১৯৬৬ ও ১৯৬৯ সালে ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেতা বিভাগে বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালে চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদেয় ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননা লাভ করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে লাভ করেন পদ্মভূষণ পদক। এছাড়াও ১৯৯৪ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা, ২০০১ সালে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বেসামরিক সম্মান ও ২০০৭ সালে স্টার স্ক্রিন বিশেষ পুরস্কার পান তিনি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত