বিশ্বজুড়ে চলছে ভয়াবহ রকমের চিপ সংকট, বাংলাদেশে সিপিইউ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ১৬:২২ |  আপডেট  : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩০

বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি বাজারে এখন চলছে ভয়াবহ রকমের চিপ সংকট। চীনে এই সংকটটা খুবই বেশি। সংকটের ঢেউ এখনও বাংলাদেশে আসেনি। ঢেউ পৌঁছাতে আরও এক থেকে দুই মাস লেগে যেতে পারে। চিপের সংকট না থকলেও দেশে কম্পিউটারের সিপিইউ’র (সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট) সংকট চলছে। দেশের বাজারে বর্তমানে ইন্টেল ও এএমডির সিপিইউ সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের প্রযুক্তি বাজারের হালনাগাদ খবর জানতে গিয়ে এসব তথ্যই উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,   ২০২২ সালের আগে চিপ সংকট দূর হচ্ছে না।

বাজারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, লকডাউনের এই সময়ে ইন্টেল ও এএমডির সিপিইউ সংকট থাকলেও সরবরাহ স্বাভাবিক আছে মাদারবোর্ড, হার্ডড্রাইভ ও র‌্যামের। দেশে ল্যাপটপের বিক্রি নেমে গিয়েছিল ৪০ শতাংশে। চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে কিছু সংখ্যক ল্যাপটপ দেশে ঢোকার কথা। লকডাউনের কারণে তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদি ল্যাপটপগুলো বাজারে আসতে পারে, তাহলে যে বিক্রি ৪০ শতাংশে নেমে গিয়েছিল, তা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে উঠে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। 

করোনাকালে দেশে ল্যাপটপ সংকট তৈরি হলেও ডেল ব্র্যান্ড তাদের সরবরাহ বরাবরই স্বাভাবিক, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সরবরাহ করে বাজারের শূন্যতা পূরণে সচেষ্ট থেকেছে। এসার ব্র্যান্ডও এই সময়ে ভালো করেছে। এর পরপরই ছিল আসুস ব্র্যান্ড। তবে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়ে এইচপি ও লেনেভো।  এই দুটো ব্র্যান্ড বেশি গ্যাপে পড়ে গেছে বলে জানা গেছে।   বাজার সূত্র আরও জানায়, এইচপি স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে দেশের বাজারে ১০ থেকে ১৫ হাজার ইউনিট ল্যাপটপ সরবরাহ করলেও করোনাকালে তাদের সরবরাহ ২ হাজারে নেমে যায়।  আগামী মাসে তা ৪-৫ হাজারে উন্নীত হতে পারে বলে পরিবেশকরা জানিয়েছেন।  লেনোভোর সংকটও প্রায় এমনই।  অপরদিকে ডেল স্বাভাবিক সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে মাসে প্রায় এক হাজার ২০০টি ল্যাপটপ সরবরাহ করলেও করোনার সময়ে এক হাজার ৮০০ ইউনিটের মতো ল্যাপটপ সরবরাহ করেছে। ফলে বাজারে ল্যাপটপের সংকটটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারেনি বলে জানা যায়।

প্রযুক্তি বাজার নিয়ে কথা হয় দেশের কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) যুগ্ম সম্পাদক মুজাহিদ আল-বেরুনী সুজনের সঙ্গে।  তিনি বলেন, ‘বাজার স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।  তবে কিছু কিছু পণ্যের সরবরাহ ধরে রেখে বাজার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।  মে মাসে ল্যাপটপের বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হবে। কয়েকটি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ বাজারে ঢোকার কথা রয়েছে।’  তিনি জানান, সরকার ঘোষিত সময়ে মার্কেট খোলার পরে বিসিএস দেশের সবচেয়ে বড় দুটি প্রযুক্তি বাজার আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটি ও এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি খুলে দিয়েছে। মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মানা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। 

বিসিএসের এই যুগ্ম সম্পাদক বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনার পাশাপাশি বিসিএসও কিছু নিয়ম চালু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— বিক্রেতারা (দোকানের কর্মী) যেন গাদাগাদি করে দোকানে অবস্থান না করেন।  প্রয়োজনে ডিউটি রোস্টার তৈরি করে একদিন পর পর ডিউটিতে রাখা।  ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে যেন ৪ ফুট দূরত্ব বজায় থাকে সে ব্যবস্থা করা।  বেশি সংখ্যক ক্রেতাকে একবারে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া (জায়গা অনুপাতে)।  বেশি ক্রেতা এলে দোকানের বাইরে অপেক্ষার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।   কর্মীদের মাস্ক পরে থাকা তো বাধ্যতামূলক। এছাড়া এই দুটি মার্কেটে প্রবেশ মুখে দর্শনার্থীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রেখেছে বিসিএস। এছাড়া দেশের অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের বাজার, শো-রুম, দোকান খোলা রাখা হয়েছে।

প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসাকে জরুরি সেবা ঘোষণার দাবি

প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসাকে জরুরি সেবার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বিসিএস। সংগঠনটির দাবি— করোনাকালে প্রযুক্তি জগত সচল রাখতে তারা ভূমিকা রাখছে। সময় মতো কম্পিউটার, হেডফোন, স্পিকার, রাউটার, নেটওয়ার্কিং পণ্য পৌঁছে দিয়ে সচল রেখেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীদের অনলাইন ক্লাস, মিটিং এবং বিনোদনের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার অনুষঙ্গ জায়গা মতো পৌঁছে দিয়ে করোনাকালে সবকিছু সচল রাখতে তারা সচেষ্ট থাকলেও জরুরি সেবা ঘোষণা না করায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সেবা দিতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে।  ফলে  প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসা খাতকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি জানিয়েছে বিসিএস। এই বিষয়ে দাবিনামা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, অন্যান্য বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকদের পাঠিয়েছে বিসিএস।  

চিপ সংকট কাটবে ২০২২ সালে?

বিশ্বজুড়ে এখন চলছে চিপ সংকট। এই সংকট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সংকট কাটতে আগামী বছর নাগাদ লাগতে পারে।  কয়েকটি খাতে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে ২০২২ সালে।

ফলে এখনই এ বিষয়ে সতর্ক করেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। বৈশ্বিক সংকটের কারণে সেমিকন্ডাকটর শিল্পে ভগ্নদশার সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি প্রতিষ্ঠানটির। বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করবে এই চিপ সংকট।  বিষয়টি নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে।

চিপ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের পার্টনার পিটার রিচার্ডসন বলেন, ‘চিপ সরবরাহের মধ্যে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সেমিকন্ডাকটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত