বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যাতীত মৃত্যু

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৭ |  আপডেট  : ৫ মে ২০২৪, ১৮:০৩

ফাইল ছবি

খুব কম লেখকই আছেন যারা পাঠকের মনে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন, তার মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় [১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ - ১লা নভেম্বর, ১৯৫০] অন্যতম। তার লেখনিতে তিনি পাঠকের মনে বিশেষ স্থান তৈরি করে গেছেন। প্রকৃতি এবং গ্রামবাংলার সমাজব্যবস্থা মানুষের মনের ভাব এত সাবলীল ভাষায় প্রকাশ করেছেন পাঠক যেন সেই স্থান এবং সেই কালে অবস্থান করে। 

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, চাঁদের পাহাড়,আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার [মরণোত্তর] লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার [লেখকের জন্মস্থান] পারমাদান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম লেখকের সম্মানার্থে রাখা হয়েছে "বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য"।

আজ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস। তার জীবনের শেষাংশ অনেকটা রোমাঞ্চকর এবং রহস্যে ভরা। ১৯১৯ সালে হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়ায় দ্বারকানাথ হাইস্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ানোর সময় বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা গৌরী দেবীর সাথে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই গৌরী দেবী মারা যান। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন।

পরে ১৯৪০ তারিখে ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমা দেবীকে বিয়ে করেন। বিয়ের সাত বছর পর একমাত্র সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (ডাকনাম বাবলু) জন্মগ্রহণ করেন।  দ্বিতীয় বিয়ের পরই তার রোমাঞ্চকর জীবনের শুরু হয়। তার স্বশুর ষোড়শীকান্ত তন্ত্রসাধনা করতেন। বিভূতিভূষণও সে সময় তন্ত্রসাধনায় আগ্রহী হয়। সেই সময়ই তার অসাধারণ ছোটগল্পসমগ্র 'তারানাথ তান্ত্রিক' লেখা শুরু করেন। 

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার একটি বইতে বলেছেন, তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প গুলো অনেকটাই সম্ভবত বিভূতিভূষণ নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন। কিন্তু শুধু প্রথম দুটি গল্প তিনি লিখে যেতে পেরেছেন। পরের গল্পগুলো তার সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন। পিতা ও পুত্রের লেখনিতে খুব একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়না। 

বিভূতিভূষণের মৃত্যুও হয়েছিল খুব রহস্যজনকভাবে যা ব্যাখ্যার অতীত। তিনি একদিন রাতে জঙ্গলের পথে গ্রামে ফিরছিলেন। বেশ নির্জন পথ, কিছুদূর যাবার পর একটি লাশের বহর দেখতে পান। কিছু মানুষ একটি লাশ বহন করে নিচ্ছে তার শেষকৃত্যের কাজে। গ্রামের মানুষ একে অপরকে চিনে থাকে তাই সাধারণত কারো মৃত্যু হলে গ্রামের সবাই জেনে থাকে। তাই বিভূতিভূষণ সেই যাত্রীদের জিজ্ঞেস করল কার লাশ নিচ্ছে ! কে মারা গেল!। যাত্রীরা লাশ নামিয়ে তাকে দেখার জন্য বলল। এরপর তিনি যা দেখলেন, যা একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য হতে পারে। যা একজন সুস্থ্য মানুষেরর হৃদপিন্ড হিম করে দিতে যথেষ্ট। বিভূতিভূষণ তার নিজের লাশ দেখতে পেলেন[তার ভাষ্যমতে]। এরপর তিনি জ্ঞান হারান এবং পরে নিজেকে বাড়িতে প্রবল জ্বরের ঘোরে আবিষ্কার করেন। এই জ্বর তিনদিন স্থায়ী ছিল, তিনদিন পর তার সমস্ত শরীর হিমশীতল হয়ে আসে। অর্থাৎ এই ব্যাখ্যাতীত ঘটনার তিনদিন পর তিনি সেই ঘটনারই অংশ হয়ে যান। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত